Story

শুধু তোমারই থাকবো | Kathamala - read, write and publish story, poem for free in hindi, english, bengali

শুধু তোমারই থাকবো

2 years ago

0



আমি আকাশ। তখন নার্সারিতে পড়তাম, পাড়ার স্কুল-এ। বাড়ির সামনেই স্কুল, তাই একাই হেঁটে যেতাম। প্রথমদিন স্কুলে গিয়ে দেখি একটা পুতুল পুতুল মেয়ে আমার পাশে এসে বসল, বন্ধুত্ব হল। মিস্টি নাম- মৌসুমি। কি সুন্দর হাতের লেখা তার, কি সুন্দর ছবি আঁকে। আমাকে একটা সুন্দর ছবি এঁকে দিয়েছিল, তাতে আমি আর মৌসুমি হাত ধরে বেলুন ওড়াচ্ছি। ছবিটা আমার খাতার মধ্যে সযত্নে রেখে দিয়েছিলাম। একসাথে টিফিন খেতাম, খেলতাম, কত খুনসুটি হত। কত সুন্দর কাটছিল আমাদের ছোটোবেলা। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথেই পড়ত মৌসুমি -দের বাড়ি। একসাথে হাত ধরে বাড়ি ফিরতাম, ওর বাড়িতে এক একদিন খেলতেও যেতাম। 


এমনি একদিন মা স্কুল থেকে নিতে এসে আমাকে মৌসুমি - দের বাড়িতে আবিষ্কার করে। সেদিন সন্ধ্যেবেলা মা পড়াতে বসেছিল, খাতার মধ্যে মৌসুমি-র আঁকা ছবিটা দেখতে পেল। মা একটু সেকেলে, বলল- 'ও, স্কুলে গিয়ে এই বয়সেই পেকে গেছ দেখছি। স্কুল-এ পড়াশুনো করতে যাও না এসব করতে যাও? আর কোনদিন এই মেয়ের সাথে যদি তোমায় মিশতে দেখি, বা ওর বাড়ি যেতে দেখি, সেদিন তোমার ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব।'  এই বলে সেই ছবিটা ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলে দিল। একবারও আমাকে একটা কথাও বলতে দিল না। তখন খুব ছোট ছিলাম তো তাই প্রতিবাদ করতে পারিনি। বড়রা যে কেন সবাইকে নিজেদের মত ভাবে, বুঝি না। ছোটোদের মত কেন ভাবতে পারে না ? ওই বয়সে কি ছাই ভালোলাগাটাই বুঝতাম যে ভালোবাসা পর্যন্ত যাব। শুধু অবাক অভিমানে মুখ ভার করে ছিলাম। পরেরদিন আবার মায়ের সাবধানবাণী শুনে স্কুলে গিয়ে দেখি মৌসুমি আসেনি। ফেরার পথে বাড়িটা একবার উঁকি দিয়ে দেখছিলাম, কাউকে দেখতেও পাইনি।

 এমন করেই মাসখানেক গেল, মৌসুমি আর স্কুলে এল না, কি যে হল কিছুই বুঝতে পারলাম না।  


হঠাৎ একদিন স্কুল-এ গিয়ে জানতে পারলাম আজ স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছে, নার্সারিতে মৌসুমি বলে কে একজন পড়ত, তার নাকি  bloodcancer না কি যেন রোগ হয়েছিল, আজ মারা গেছে। কিছুই বোধগম্য হল না, এক নিঃশ্বাসে ছুট্টে মৌসুমি -দের বাড়ি পৌঁছে দেখি, ওদের উঠানে মৌসুমি শুয়ে আছে, সাদা কাপড়ে ঢাকা--- সাদা রঙে তাকে আরো যেন পুতুল পুতুল লাগছিল- নিষ্পাপ, কোমল মুখখানি। আমি সেখানে স্থাণুবৎ দাঁড়িয়ে রইলাম। চোখ দুটো খোলা, তার থেকে জলের ফোঁটা ঝরে পড়ছে, সব বুঝেও যেন বুঝতে চাইছে না মন, চোখের জল মোছার জন্য হাতটা ওঠানোর ক্ষমতাও ছিল না। সত্যটাকে অনেক সময় বুঝেও মানার মত শক্তির যোগান সবসময় থাকে না।  


এরপর কেটে গেছে অনেকদিন, আর কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করার ইচ্ছা কোনোদিন হয়নি, বলা ভাল তেমন কাউকে পাইনি। এক শীতের সকাল। গোটা মাঠ লোকে লোকারণ্য। অঙ্ক  প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলছে। মঞ্চে পুরষ্কার নিয়ে ফিরে আসছি, দেখে মনে হল, ভিড়ের মধ্যে একটি মেয়ে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে আমার মৌসুমি- র কথা মনে পরে গেল।  আমিও তাকালাম। একটু পর মনে হল, আমার দিকে তো নয়, আনমনে বুঝি অন্য কোনো দিকে তাকিয়ে আছে। 

তারপর দেখলাম, ও একই ক্লাসে পড়ে, আমাদের পাশের স্কুলে, নাম রাত্রি। তারপর থেকে কেন জানিনা স্কুলের পাশের দোকানটায় দাঁড়িয়ে থাকতাম, লুকিয়ে ওকে দেখতাম, কিসের টানে, বলতে পারব না। হয়ত ওকে দেখে মৌসুমি -র কথা মনে পড়ত তাই। এই মেয়েটিও পুতুল পুতুল, খুব প্রাণবন্ত, বুদ্ধিদীপ্ত, তবে একটু গম্ভীর, তাই কথা বলার কোনোদিন সাহস হয়নি।  


এরপর ক্লাস এলেভেন,এইসময় অন্য স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা আমাদের স্কুলে ভর্তি হত। প্রথমদিন ক্লাসে বসে আছি, দেখি  রাত্রি এসে ঢুকল, তাকে দেখে চোখটা নামিয়ে নিলাম, বুকের ভিতরে কে যেন দামামা পেটাচ্ছে। ভেবেছিলাম, যাক এবার একজন  সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া গেল। ওকে দেখলে মনে হত, আমাকে যদি কেউ হারাতে পারে তো সে একমাত্র রাত্রি। মাঝে মাঝে তার সাথে চোখাচোখি হত, তবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারতাম না।  ওর গাম্ভির্যের বেড়া ডিঙিয়ে সরাসরি কথা বলার সাহসও হত না।  সেবার সরস্বতী পূজায় একসাথে হাতে হাতে কাজ করতে, আলপনা দিতে, প্যান্ডেল সাজাতে মন্দ লাগেনি।  লুকিয়ে লুকিয়ে কতবার দেখেছি, তার ইয়ত্তা নেই। হলুদ শাড়ি পরে তাকে সেদিন অপরূপা লাগছিল। সেইদিন সন্ধ্যের আরতি নিয়ে   যখন আমার কাছে এল, অন্ধকারের মধ্যে তার সেই উদ্ভাসিত মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেছিলাম---আর ভাবছিলাম অত গাম্ভির্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মেয়েটা এভাবে নিজের সবটুকু উজাড় করে কিভাবে কারো মঙ্গলকামনা করতে পারে। মুগ্ধ হয়ে দুচোখ ভরে দেখেছিলাম। তারপর সময় ঘনিয়ে এল জয়েন্ট পরীক্ষার। সেদিন পরীক্ষা শেষে হলের বাইরে বেরিয়ে দেখি রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে, আমি উল্টোদিকে ঘুরে চলে এসেছিলাম, তাকাতে পারিনি পিছন ফিরে, চোখদুটো ভারী হয়ে এসেছিল, আবার আমার 'মৌসুমি'- কে হারিয়ে ফেললাম না তো? আর দেখা যদি না হয়?


Result বেরোল, আমি Medical-এ চান্স পেলাম, খুব খুশি। শুনলাম রাত্রির নাকি ভাল  result হয়নি, ও Engineering পড়বে, শুনে খারাপ লাগল খুব। এই হয়ত আমাদের গন্তব্য আলাদা হয়ে গেল। এরপর নতুন কলেজ, নতুন বন্ধু নিয়ে কিছুদিন সত্যি খুব ব্যস্ত ছিলাম, রাত্রির কথা মনে যে পড়ত না, তা নয়, তবে ফুরসৎ পাইনি। একদিন সময় করে এক  বন্ধুর থেকে রাত্রির নাম্বার নিয়ে ফোন করলাম।  

- হ্যালো, রাত্রি, আমি আকাশ বলছি। ভালো আছিস?

অনেকক্ষণ পর ওপাড় থেকে ধীরে ধীরে উত্তর এলো,

-হ্যাঁ, ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

-এইত ভালো। নতুন কলেজ কেমন লাগছে?

আবার চুপচাপ। ধীরে ধীরে উত্তর এলো,

-ভালো। 

-নতুন নতুন বন্ধু হল?

আবারও চুপচাপ। ধীরে ধীরে উত্তর এলো,

-ওই হল।

এবার কি বলব খুঁজে পেলাম না। অবাক হয়ে গেলাম এ কে? এ কি সেই রাত্রি? সে তো প্রানোচ্ছল, গম্ভীর ছিল ঠিকই, তাই বলে এরকম চুপচাপ, এত গম্ভীর। এর সাথে বন্ধুত্ব করব কি ভাবে? মাঝে মাঝে রাত্রি ফোন করত, আমিও মাঝে মাঝে করতাম, কিন্তু ওই টুকটাক কথাবার্তা। কি খবর, কেমন আছি, ব্যস। ওই একইভাবে, ধীরে ধীরে, খুব আস্তে, যেন ওর জীবনীশক্তি কেউ চোঁচোঁ করে শুষে নিয়েছে।  দুএকটা কথা বলার পরই মনে হত অনেক কথা বলে ফেলেছি, হাঁপিয়ে উঠতাম । খেই হারিয়ে ফেলতাম, কি বলব আর বুঝতে পারতাম না। কাজের মধ্যে ফোন করলে তো ভীষণ মাথা গরম হয়ে যেত। একদিন রেগে জিজ্ঞাসাই করে ফেললাম,

-তুই এত চুপচাপ কেন রে? তোর কোনো বন্ধু আছে? কারো সাথে তুই কোনো কথা বলিস?

-বলি তো।

-আমার তো মনে হয়না, তোর কোনো বন্ধু থাকতে পারে।

-কেন ?

-এই এই জন্য। সব কথার ধীরে ধীরে উত্তর। আরে নিজেকে একটু খোল। সিন্দুক খুলতে বলছি না, মনের দরজা তো সবার জন্য খুলতেই পারিস। তুই না খুব boring. তোর রুমমেটকে দেখেছিস, ও তো আমাকে চেনে না, অথচ কি সুন্দর কথা বলে। সাধারণ কথাও তোর সাথে বলা যায় না। কথাই খুঁজে পাই না। আগে ভালো করে কথা বলতে শেখ তারপর কথা বলতে আসিস।ফোন কেটে দিলাম।


এরপর কি হল কে জানে, ফোন করলে জোর করে অনেক কথা বলতে আসত, কি কখন কোথায় বলতে হয় বুঝত না। হঠাৎ একদিন জিজ্ঞাসা করে বসল,

-তোর কোন মনের মানুষ আছে, যাকে তুই সব কথা বলতে পারিস?

আজব প্রশ্ন, তবু উত্তর দিলাম। 

-আছে ত।

-কে সে? আমি কি তাকে চিনি?

-না তুই তাকে চেনার কথা না।

-কি নাম তার?

 আমার পরিচিত একজনের নাম বললাম। তারপরই ও তার সাথে আলাপ করতে চাইল। এবার যে কি বলি। এড়িয়ে যেতে চাইলাম। তার দুঃখের কথা বলে। হঠাৎ ক্লাসে সূর্যের কথাটা মনে পড়ল, ও বলেছিল, ওর নাকি রাত্রিকে ভালো লাগে। রাত্রিরও কি ওকে ভালো লাগে? কথাটা ওকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। 

-সূর্য-র নাকি তোকে পছন্দ। তাই?

এই কথার যে প্রতিক্রিয়া হল, তা আমি কল্পনাও করতে পারি নি। হঠাৎ রেগে গেল, আমাকে ভুল বুঝল।  দুম করে রেগে গিয়ে ফোনটা switch off করে দিল। আমি হতভম্বের মত বসে রইলাম। তাহলে কি আমি ওকে না বুঝেই আঘাত করে ফেললাম? ও তো খুব চাপা, কিছুই বলে না। কোনো চাপা কষ্টে আঘাত দিয়ে দিলাম বুঝি। খুব খারাপ লাগছিল। কি করব কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ওর রুমমেট কে মেসেজ করলাম,

-রাত্রি কেমন আছে, ফোন সুইচ অফ বলছে। আমাকে একটু জানিও প্লিস। ওকে একটু দেখে রেখ। ওর মনটা একটু খারাপ। আর রাত্রিকে বোলো আমি সারাজীবন ওর বন্ধু থাকব। 


এরপর কদিন আর আমাকে ফোন করেনি। তারপর যেদিন প্রথম ফোন করল, দেখলাম, এ এক অন্য রাত্রি। সেই আগের ক্লাস এইটে দেখা প্রাণোচ্ছল যে মেয়েটাকে আমি চিনতাম সে। এতদিন ধরে চেষ্টা করেও আমি যা বদলাতে পারিনি, ওই একটা কথায় কি এত দুঃখ পেল যে সে একেবারে আপাদমস্তক বদলে গেল? তবে যাই হোক, এই রাত্রিকে আমার খুব ভালো লাগে, এ যেন কতদিনের চেনা, যাকে সব কথা বলা যায়, ঘন্টার পর ঘণ্টা শুধু আবোলতাবোল বলে কাটিয়ে দেওয়া যায়। কলেজে এখুন প্রচুর pressure, political দাদা আর roommate -দের পাল্লায় পড়ে আমার পড়াশুনোটা মার খেয়ে গেছে, সেটা এবার শুরু করতে হবে। এই খারাপ সঙ্গ থেকে বের হওয়া মুখের কথা নয়। রাতের পর রাত প্রাণ হাতে করে পালিয়ে পালিয়ে বাঁচা । তবে এই সময় রাত্রি কে, না রাত-কে (আজ থেকে ও আমার কাছে রাত) আমার পাশে সবসময় পেয়েছি। ও না থাকলে, এই লড়াই আমি একা জিততে পারতাম না। সারাদিনের নানা ঝামেলার পর রাত-কে যখন ফোন করি, মনে হয়, এইত, আমার সবথেকে নিরাপদ, শান্তির জায়গায় চলে এসেছি, আর কোনো ভয় নেই, আর কোনো চিন্তা নেই--- শান্তিতে ঘুমিয়ে যাই। আজ আমার সবথেকে কাছের বন্ধু রাত্রি। এখন তাকে দেখে আবার নতুন করে ভালোলাগাতে ইচ্ছা করে, হয়ত ভালবাসতেও। কিন্ত আমি তো তার সবথেকে ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারিনি, তার মনের তল খুঁজে পাইনা। ওকে জিজ্ঞাসা করতেও ভয় লাগে, পাছে আবার ভুল 

বুঝে দূরে চলে যায়। আমি তো রাত-কে হারাতে চাই না। অনেক কষ্ট করে সেই পুরনো রাত-কে খুঁজে পেয়েছি। সেদিন যখন সূর্য বলছিল, ওর ওকে ভালো লাগে, আমি যে কতটা ধাক্কা খেয়েছিলাম, সে শুধু আমিই জানি। তাই ওর কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম । কতটা যে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম, বলে বোঝাতে পারব না। অনেকবার মনে হয়েছে ওকে আমার মনের কথা বলি। কিন্তু যদি ও reject করে দেয়? আমি একবার মৌসুমি- কে হারিয়েছি, রাত কে হারাতে হারাতে ফিরে পেয়েছি, আর হারাতে পারব না।   



Atlast final year-এর  result বেড়িয়েছে। আমি Honours নিয়ে পাশ করেছি। আমি পেরেছি রাত। আজ খুব ইচ্ছা করেছিল রাত-কে সামনে থেকে দেখার। ওকে আসতে বললাম। মুখের উপর বলে দিল আসতে পারব না। খুব খারাপ লাগল। তাহলে কি আমি ওর মনের একটুও কাছে যেতে পারিনি? রাতে আবার ফোন করল। রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করল, তারপর যেটা বলল, তার জন্য আমি একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না।

"দেখ আজ আর বলতে কোনো বাধা নেই। তুইও নিশ্চয়ই বুঝিস। তখন বয়স অল্প ছিল, ভালোলাগা, ভালোবাসা কি পরিষ্কার করে কিছু বুঝতাম না। ভাবতাম, তোকে আমি ভালোবেসেছি। কিন্তু যত তোকে জেনেছি, এটুকু বুঝেছি, তোর ভালোবাসার মানুষের নয়, একটা বন্ধুর খুব দরকার। তাই এতদিন ভালো বন্ধু হবারই চেষ্টা করে গেছি, আশা করি সফল ও হয়েছি। আজ আমরা অনেক পরিণত, তাই একটা কথা বলছি, আমি আজও তোকে ভালোবাসি, শুধু বন্ধু বলে ভাবতে পারি না। তোকে সামনে দেখলে আমার আরো কষ্ট হত। এতে তোর কোন দায় নেই। এই দায় সম্পূর্ণ আমার। "

 আমি শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। সত্যি রাত আমাকে সেই ছোটোবেলা থেকে ভালোবাসে, আর তাই সেদিন দুঃখ পেয়েছিল? আমি কত বোকা ছিলাম। তারপর  যেটা বলল, তার জন্যও প্রস্তুত ছিলাম না।

- "তোর ত এখন bright future সামনে ।  আমাকে আর তো কোন দরকার নেই, আমাকে এবার ছুটি দে। "

রেগে গেলাম। কিভাবে আমি তোকে যেতে দিতে পারি? সেদিন রাগ করে জোর করেই ওকে ধরে রাখলাম, তবু আমার মনের কথাটা বলতে পারলাম না। সেদিন কথায় কথায় আমায় অজান্তেই আমার জন্মদিনের সময়টা মনে করিয়ে দিয়েছিল, অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এটা তো কেউ জানে না। না জেনেও এত সঠিকভাবে কেউ কার জন্মসময় বলতে পারে?


রাতের মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ থাকত, জিজ্ঞাসা করলে বলত, "কিছু কিছু দুঃখ থাকে জানিস, যেগুলো একান্তভাবে নিজের, কাউকে বলা যায় না।" বুঝতে পারি রাত,  মাঝে মাঝে মনে হয় ছুট্টে গিয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরি, তোমার কোলে মাথা গুঁজে শুয়ে থাকি, পারি না। জানি তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি, কিন্তু কষ্ট পেয়োনা রাত। তুমি যা কষ্ট পাচ্ছ, তার থেকে অনেক বেশি কষ্ট যে আমার হচ্ছে। এ সময় যে ভালোবাসায় ভেসে যাওয়ার নয়, সামনে অনেক কঠিন পথ, তোমারও , আমারও । তোমাকেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, আমাকেও অনেক   struggle করতে হবে। মনকে অনেক শক্ত করতে হবে রাত। তার আগে তোমাকে নিজেকে তৈরি হতে হবে। আমার জীবনটা তো ফুলের মত নয়, সেখানে অনেক বাধা, অনেক কষ্ট থাকবে, এত নরম মনের হলে আমার সাথে পথ চলবে কেমন করে? 


আজ শুনলাম, রাতের কলেজে strike ছিল। বেচারা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, খুব ক্লান্ত। দেখে খুব কষ্ট হল। কিন্ত আমার যে খুব ইচ্ছা করছিল ওর সাথে কথা বলতে,এক্টু ক্ষণ সাথে থাকতে। বেচারা তো কথা বলার অবস্থাতেই নেই। তাই কপট রাগ দেখিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম। কিন্তু নিজের মনকে শান্ত করতে পারলাম না। কেন যে এমন অস্থির লাগছে জানি না।  খালি রাত-এর সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছে। অবুঝ মন। আর একবার ফোন করে দেখি! রাত ফোনটা তুলল ঠিকই কিন্তু একটু পর ঘুমিয়ে গেল, ফোনটা ধরাই রইল। তার ঘুমের মধ্যের ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ আমার কানে বাজতে থাকল। খুব ইচ্ছা করছিল তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সে উপায় যে নেই। নিজের মনের কথা আর চেপে রাখতে পারলাম না। Propose টা করেই দিলাম। 

"জানি, অনেকটা দেরী করেছি, তোকে অনেক অপেক্ষা করিয়েছি, কিন্তু জানিস তো আমি সব decision অনেক ভেবেচিন্তে নিই, বিশেষ করে নিজের জীবনের ব্যাপারে। জানি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, আমিও কষ্ট পেয়েছি। কিন্ত আর পারছি না, আর তোকে কষ্ট দেব না রাত। তোর পুরোপুরি তৈরি হতে আরো খানিক সময় হয়ত লাগবে, কিন্তু সেটা আমি handle করে নেব। কিন্তু তোকে , (না আজ থেকে তুমি), তোমাকে এড়িয়ে শুধু তোমাকে না, আমি নিজেকেও কষ্ট দিচ্ছি। আর সরিয়ে রাখব না। আমি খুব কাঠখোট্টা, তাই এইসব

 কথা সামনাসামনি বলতে পারিনি, তুমি পারবে না আমার ভুলগুলো ক্ষমা করে আমাকে কাছে টেনে নিতে? আমি তো তোমারি ছিলাম রাত, শুধু তোমারই থাকব, কিন্তু তোমার অন্ধকার নিয়ে নয়, ভোরের নরম একমুঠো রোদ্দুর নিয়ে। সামনের পথ কিন্তু মসৃণ হবে না, তবে আমি জানি, আমরা একসাথে ওই পথ হেঁটে যেতে পারব। আজ আমি মুক্ত, তোমার হাতে নিজেকে সমর্পণ করে আমি মুক্ত, কারন তুমি যে আমার সবথেকে নিরাপদ আশ্রয়। আজ তুমি ঘুমিয়ে আছ ঠিক ই, কিন্তু আমি জানি আমার না-বলা কথাগুলো বুক দিয়ে অনুভব করার মত মন তোমার আছে। তুমি শান্তিতে ঘুমাও, কাল সকালে খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে। "  


ফোনটা রেখে দিলাম। দেখি ভোর হয়ে আসছে, আজ আর ঘুম হবে না, তাই ইয়ারফোনটা কানে লাগিয়ে ছাদে গেলাম। দেখি রাত্রির অন্ধকার কেটে গিয়ে পূবের আকাশে একমুঠো রোদ্দুর ছড়িয়ে পড়েছে, আর একটি কৃষ্ণচূড়া আর একটি রাধাচূড়া সেই রোদ্দুর মাখামাখি করে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা ভরে গেল। ঠিক তখনই কানে গান বাজতে লাগলো-


"এক মুঠো রোদ্দুর হাতে,এক আকাশ নীল

আজ তোমার জন্য ব্যস্ত শহরে,চলছে ভালবাসার মিছিল

শুধু তোমার জন্য, প্রেমের জোয়ারে ভাসল দু’কূল ।।"




Comments

To comment on content, please Login!

Comments & Reviews (0)

No comments yet :(