সকাল থেকেই দম ফেলার জো নেই রায়গিন্নির। রান্নাঘরে ঢুকে থেকে আর বেরোনোর ফুরসৎ পাননি একবারও। খুন্তি হাতে তৎপরতার সাথে প্রস্তুত করে চলেছেন একের পর এক সুস্বাদু আইটেম। একমাত্র ছেলে রক্তিমের জন্মদিন আজ। সকাল থেকেই বাড়িতে তাই সাজো সাজো রব। রাতে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে জমকালো সেলিব্রেশন। তার ওপর গতকালই সদ্যোজাত নাতনিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে বউমা আর্যমা। সবমিলিয়ে আনন্দ যেন ফুলঝুরি হয়ে আলো ঝরাচ্ছে রায়ভিলায়।
হঠাৎই বেজে উঠল ডোরবেল। ঘড়িটা কাঁটা তখন এগারোটা ছুঁইছুঁই।একদল হিজড়ে ঢাকঢোল নিয়ে হাজির বাচ্চা নাচাতে। রায়গিন্নি সবেমাত্র বসিয়েছেন ছেলের প্রিয় সিমাইয়ের পায়েসটা। এসময় হঠাৎ রান্না ছেড়ে গেলে পায়েস বেশি ফুটে যাবে যে….. অগত্যা বাধ্য হয়েই তাই বন্ধ করলেন ওভেন। আলমারি খুলে টাকা বের করে রাগে গর্জাতে গর্জাতে নামতে থাকলেন ঝাঁ চকচকে সিঁড়ি বেয়ে। সত্যিই হিজড়েগুলোরও কোনো সময়জ্ঞান নেই। ঢাকঢোল বাজিয়ে বাচ্চা নাচাতে চলে এলেই হল!
দরজা খুলে প্রবল ঔদ্ধত্যে টাকার বান্ডিলটা ওদের মুখে ছুঁড়ে মারতে যেতেই থমকে গেল রায়গিন্নির হাত। ভিজে উঠল চোখের পাতা। দলের সর্দারের মুখটা হুবহু যেন রক্তিমের মতোই। আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে এমনই এক দোসরা জুলাই যমজ সন্তানের মা হন রায়গিন্নি। একজন রক্তিম। আরেকজন --- রাজপথের এই বৃহন্নলা, পঁচিশ বছর পর দেখা হলেও জন্মদিনে মায়ের হাতের পায়েস খাওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি…..
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(