বৃদ্ধাশ্রম
হৃদয় আহম্মেদ
জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করে রাসেলকে মানুষ করেছে তার মা-বাবা। অর্থ,বৃত্তের অভাব কখনো বুঝতে দেইনি রাসেলকে। যখন যা প্রয়োজন তা-ই পেয়েছে মা-বাবার কাছে। রাসেল আজ সফল। বিগত তিন বছর যাবৎ চাকরি করছে নামি-দামি কোম্পানিতে। ছয় অঙ্কের বেতন তার। তার সাফল্যে মা-বাবার খুশির অন্ত নেই।
রাসেলের স্ত্রী রাসেলের মা-বাবার সাথেই থাকে। রাসেল তার চাকরি সূত্রে সরকারি কোয়ার্টারে থাকে। এতদিন বৃদ্ধ মা-বাবার সেবা করার জন্য স্ত্রীকে তাদের কাছে রেখেছিল। কিন্তু নিজের সেবা শুশ্রূষার জন্য স্ত্রীকে খুব করে পাশে চায় রাসেল। তাই একদিন গ্রামে ফিরে বৃদ্ধ মা-বাবাকে বললো, স্ত্রীকে তার সাথে নিয়ে যাবে। ছেলের মুখে কথাটি শুনে মা-বাবার মুখ মলিন হয়ে গেলো। রাসেলের মা বলছে,"তাহলে আমাদেরকে কোথায় রেখে যাবি?" "মা,আমি তোমাদের সব ব্যবস্থা করে আসছি। ঢাকায় অনেক বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। টাকার বিনিময়ে ভাল সেবা যত্ন করে রাখে। যেহেতু ঢাকায় ফ্লাটের ভাড়া অনেক বেশি তাই তোমাদের বৃদ্ধাশ্রমেই রাখা ভাল হবে।" বৃদ্ধ মা-বাবা ছেলের মুখে এমন কথা শুনার পর নীরবে চোখের জল ফেলছে। সব অর্থ, সম্পত্তি,জায়গা-জমি শেষ করেছে ছেলেকে মানুষ করার জন্য এই বুঝি মানুষ হওয়ার নমুনা? "মা আমি গাড়ী নিয়ে এসেছি আজই তোমাদেরকে নিয়ে যাব ভাবছি। আর আসবাবপত্র বিক্রি করে দেব। সাথে ট্রাক নিয়ে এসেছি ওরা সব তুলে নিয়ে যাবে এখুনি । আমরা বিকালের দিকে রওয়ানা দেব। তোমরা তৈরী হয়ে নাও। সাথে কিছু নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বৃদ্ধাশ্রমে আমি তোমাদের জন্য সবকিছু বুকিং দিয়ে রেখেছি।" স্মৃতিগুলো ফেলে চলে যাবে। আবার সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছে। ছেলের এমন পরিবর্তনে মা-বাবা দুজনই থতমত খেয়ে গেল। ছেলেকে বুঝানোর কোন ভাষা পাচ্ছেনা বলেই হয়তো চুপ করে অশ্রুতে চোখ ভাসাচ্ছে। বিকালের দিকে মা-বাবা আর স্ত্রীকে নিয়ে শহরের দিকে রওনা হলো রাসেল। যাওয়ার পথে মা-বাবার চোখে অবিরার জল ঝরছে। কী এমন পাপের শাস্তি ছিলো? শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধাশ্রম! রাত দশটার দিকে,আলোক সজ্জায় সজ্জিত একটা এপার্টমেন্টের সামনে তাদের গাড়ী এসে থামলো। বৃদ্ধ মা-বাবাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য লাল গালিচা পাতানো। পুষ্পগুচ্ছ হাতে কয়েকজন দাঁড়িয়ে। মা-বাবা মনে মনে ভাবছে সত্যিই কী বৃদ্ধাশ্রমে এত আপ্যায়ন হয়? ধীরে ধীরে মা-বাবা আর স্ত্রীকে নিয়ে একটা ফ্লাটে ঢুকলো রাসেল। সাজানো গুছানো ফ্লাট। চারপাশে মা-বাবার স্মৃতিসমেত আসবাবপত্র। সবকিছুই ফ্লাটে জায়গা পেয়েছে। এতসব দেখে মা-বাবা তার সন্তানের দিকে তাকাচ্ছে। ছেলে মা-বাবাকে চমকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলছে, আমি তোমাদের জন্য এই বৃদ্ধাশ্রমটা বানিয়েছি- যেখানে তোমাদের সেবা করার জন্য তোমাদের ছেলে আর তোমাদের ছেলে বউ থাকবে। গত সপ্তাহে এই ফ্লাট কিনেছি শুধু তোমাদেরকে নিয়ে একসাথে থাকবো বলে। ছেলের এমন অদ্ভুত কান্ড দেখে মা-বাবা দুজনই ছেলেকে জড়িয়ে কান্না করতে লাগলো। নাহ! এই কান্না দুঃখের নয়- সুখের কান্না!
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(