দেখতে দেখতে লকডাউন আজ পেরিয়ে গেল তিন মাস। কারখানার কাজ হারিয়ে বাড়িতে বসে নিরুপায় শ্যামল। বউ স্বাগতার হাতে বানানো মাস্ক নিয়ে কয়েকদিন বাজারে ফেরি করলেও থ্রি-লেয়ার কিংবা এন৯৫ ছেড়ে পাতলা সুতির মাস্কের দিকে ফিরেও তাকায়নি কেউ। সময়ের সাথেসাথে সঞ্চয়ও ফুরিয়ে আসছে ক্রমে। দুধ না পেয়ে খিদের জ্বালায় রোজ কেঁদে ওঠে দু'বছরের ছেলেটা। শেষ কবে পেট ভরে ভাত জুটেছে নিজেদের --- অনেক ভেবেও মনে করতে পারে না কিছুতেই।
সাতসকালেই স্বাগতা বেরিয়ে পড়েছে কাজের সন্ধানে। মালতীটাকেও নিয়ে গেছে সাথে। কোনো বাড়িতে বাসন মাজার কাজ পেলেও দিনগুলো কষ্টেসৃষ্টে উৎরে যেত এ যাত্রায়। মালতী ওদের পোষা ছাগল। গোবিন্দ পেটে আসার পর জামালপুরের মেলা থেকে শখ করে ওকে কিনে এনেছিল স্বাগতা। গোবিন্দ আর মালতী আজও সমান তার চোখে --- নিজের পেটের সন্তানের চেয়ে কম নয় কিছু।
রাস্তায় পা রাখতেই স্বাগতাকে ডাকলেন রুদ্রবাবু। সরকারি কলেজের অধ্যাপক এই ভদ্রলোকের টাকাপয়সার অভাব নেই কোনো। স্বাগতার হাতে দুশোটা টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন , পোষা অ্যালসেশিয়ানটার জন্য বাজার থেকে তিনশো মাংস এনে দিতে। লকডাউনের কারণে ইদানিং বাড়ি থেকে বেরোনো হচ্ছে না একদম।
শেষ তিনরাত পেটে ভাত পড়েনি স্বাগতার। বাচ্চা পায়নি দুধ। রুদ্রবাবুর টাকাটা হাতে পেতেই তাই চিন্তাটা খেলে গেল মাথায়। বাজারে গিয়ে কসাইয়ের হাতে তুলে দিল কন্যাস্নেহে বড় করা মালতীকে। রক্তাক্ত মালতী শেষ নিঃশ্বাস অবধি তাকিয়েছিল কেবল স্বাগতার দিকে। ' ম্যা-ম্যা ' স্বরে ওকে ডেকেওছিল প্রাণপণ। তারপর টুকরো টুকরো মালতীর মাংস বন্দি হয়ে গেল প্লাস্টিকে। বিনিময়ে স্বাগতা পেল পাঁচ হাজার টাকা। সংসারটা ওতে চলে যাবে কয়েক মাস। প্যাকিংবন্দি মালতীর টুকরো করা দেহটা ' মাটন ' নামে স্বাগতার হাত ধরে হাজির হল রুদ্রবাবুর অ্যালসেশিয়ানের প্লেটে।
কন্যাহারা,বিধ্বস্ত মেয়েটা আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে একছুটে রওনা দিল নিজের বাড়ির দিকে। চৌকাঠে পা রাখতেই দেখলো , কড়িবরগা থেকে ঝুলছে শ্যামলের নিষ্প্রাণ দেহটা। অভাবদীর্ণ ,বেকার পুরুষের সামনে আত্মসম্মান রক্ষার আর কোনো পথ ছিল না যে। মেঝেতে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে গোবিন্দ। পাশে ছড়িয়ে মল্লিকদের গাছের হিমসাগর আম। ক্ষুধায় কাতর ছোট্ট গোবিন্দের কান্না থামাতে ভোরবেলা পাশের বাগান থেকে অবলা মালতী মুখে করে কুড়িয়ে এনেছিল যে….
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(