Story

Short story | Kathamala - read, write and publish story, poem for free in hindi, english, bengali

Short story

2 years ago

0

শেষ থেকে শুরু


আসমাউল হুসনা উর্মি 


এক পরন্ত বিকেলে বারান্দায় বসে চা এর কাপে চুমুক দিচ্ছি আর ভাবছি সেই অশুভ দিনের কথা। তখন বয়স কম, যাকে বলে সবে তারুণ্যে পা।আমি আজ থেকে বহু বছর আগের কথা ভাবছি বসে।

১৯৯৭ সাল, তারিখটা ছিল ৭ই ফেব্রুয়ারী, এমনই একটা পড়ন্ত সুন্দর বিকেলে তার সাথে দেখা। একটা কোলাহলে পূর্ণ উৎসব মুখর বিয়ে বাড়ি। সে এসে আমার পাশে বসলো, প্রথমে তাকে খেয়াল করিনি ঠিক তা না, শুরু থেকেই আড়চোখে তাকে আমি দেখছিলাম। কিন্তু সে আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিল না।


আসল মাত্রা তো যোগ হলো যখন আমার ছোট বোন এসে বলল " ওর নাম জোনাকি।" আমার বোন এসে জোনাকির সাথে গল্প জুড়ে দিল, এবার আমিও একটু চেষ্টা করলাম জোনাকির সাথে কথা বলার। বেশি কষ্ট করতে হলো না, আমার ছোট বোন রিয়া থাকায় সে বেশ সহজ ভাবেই আমার সাথে গল্প করছিল। বিকেল থেকে সন্ধ্যা বুঝতেও পারলাম না কখন কেটে গেল। এভাবে আরো কিছুটা সময় গল্পে গল্পে কেটে গেল তারপর জোনাকি বলল" এখন তবে উঠি, কাল আবারো দেখা হবে"। সারাটা রাত আমার সেদিন ঘুম হলো না,শুধু জোনাকির হাসি ওর কথা বলার ধরনের কথা মনে আসছিল, আমার চোখের পাতায় ভাসছিল। একদিকে মনের ভেতর প্রথম প্রেমের জোয়ার স্রোত আর অন্যদিকে বুকের ভেতর এক বিষাদ ব্যাথার ভাটা, বার বার মনে হচ্ছিল জোনাকি তো কালই চলে যাবে, জানি না আর কোনোদিন ওর সাথে দেখা হবে কিনা, তবে কি শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে এই প্রনয়-পর্ব!!!


এসব ভাবতে ভাবতে ভোরের দিকে কখন যেন চোখ লেগে গেছিল।হঠাৎ চোখ খুলে দেখি বেলা কম হয়নি। তাড়াহুড়ো করে উঠে ঘরের বাইরে গিয়ে দেখি জোছনা আমার প্রস্ফুটিত ফুলের মতো সবার সাথে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। আমি ওর দিক থেকে তো কিছুতেই চোখ সরাতে পারছিলাম না, রিয়া এসে আমাকে না ডাকলে আমি হয়ত অনন্তকাল এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতাম আর ওকে দেখতাম। দিনটা এভাবেই মুগ্ধতা আর জোনাকির চাঞ্চল্যে পার হয়ে গেল

,কিন্ত হায়, বিদায় বেলা বয়ে যায়। 

আমি ঠিক করে ফেললাম," না, ওকে এভাবে যেতে দেওয়া যায় না। আমি এই মুহূর্তে আমার মনের সব কথা ওকে খুলে বলব।"

যেমনটি ভাবা ঠিক তেমনটি কাজ। সুবিশাল আকাশের নিচে খোলা মাঠের বুকে দাড়িয়ে খুব ভয়ে ভয়েই ওকে বললাম " জোনাকি, আর পাঁচ টা ছেলের মতো আমি অতো সুন্দর করে হয়ত তোমাকে আমার মনের কথাগুলো বোঝাতে পারব না তবু চেষ্টা করছি, জানি না এটাকেই ভালোবাসা বলে কিনা, আমি জানি না এটা ভালোবাসা নাকি শুধুমাত্র ভালো লাগা! তবে আমি না খুব করে তোমাকে চাই। তোমাকে প্রথম দেখেই আমার ভালো লেগেছে, তুমি আমার আসে পাশে থাকলে আমার খুব ভালো লাগে, আমার ভিতর একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে। আমি!!! আমি!!!!! মানে..... তুমি কি আমার বাঁচার কারণ হবে,জোনাকি!!!!! এই সাগরের জীবনের জোনাকি হবে!!???

আমি ভেবেছিলাম জোনাকি আমার এই কথা শুনে রেগে যাবে কিন্তু না আমার ধারনা ভুল করে সে বললো, " সাগর আমি তোমাকে অনেক আগে থেকে চিনি, আমি যখন ক্লাস নাইনে আর তুমি তখন মাধ্যমিকে তখন থেকেই তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে কিন্ত তুমি কি মনে করবে ভেবে আমি আমার মনের কথাগুলো তোমাক জানাইনি।"


এভাবেই আমাদের প্রেমের প্রনয় শুরু হয়, তারপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক আরও গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। আজকালকার প্রেমিক-প্রেমিকাদের মত আমাদের আলাপ মোবাইলে নয় বরং চিঠিপত্রে হতো। আমাদের মনে হতো আমরা যেন এক আত্মা দুই শরীর। 

 এভাবেই দেখতে দেখতে তিনটি বছর পেরিয়ে গেল, এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের এই ভালোবাসার বন্ধনটাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করব।


 একদিন বিকেলে আমি ওর বাড়িতে গেলাম,জোনাকির বাবা-মাকে আমাদের বিয়ের কথা জানাতে। আমি ওনাদেরকে সব বুঝিয়ে বললাম আর বললাম আমরা দুজন দুজনকে অনেক বেশি ভালোবাসি, আপনারা অনুমতি দিলে আমরা বিয়ে করে নিতে পারি এবং সুখের সংসার করতে পারি। কিন্তু আফসোস তারা আমার এই কথা শুনে অত্যন্ত রেগে গেলেন এবং বললেন, "তুমি কি এমন চাকরি করো যে তোমাকে আমি আমার মেয়ে দিব!" তারা আমাকে তাড়িয়ে দিল আর আমি লক্ষ্য করলাম আমার জোনাকির চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। অত্যন্ত অপমানিত হয়ে সেদিন ফিরে এলাম, বাড়ির এসে ভাবছিলাম আমি ওকে ছাড়া বাঁচব,কীভাবে! খুব কষ্ট হচ্ছিল। বুকের ভিতর একটা কাটা বারবার বিধছিল আর মনে হচ্ছিল জোনাকিকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ওকে আমার চাই ওকে আমি ভালোবাসি অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। নিজের অজান্তেই চোখের কোনা দিয়ে নোনা পানি ঝরছিল। এভাবে ঘর বন্ধ দশায় একটা দিন আর একটা রাত পার হয়ে গেল।

 পরেরদিন একটু সুস্থ বোধ হলে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি একটা চিঠি পড়ে আছে, চিঠিটা তুলে দেখি ওটা জোনাকি পাঠিয়েছে। ওতে সে লিখেছে" সাগর আমি আর এখানে থাকতে পারছি না,আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি, আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।এখান থেকে অনেক অনেক দূরে কোথাও নিয়ে চলো যেখানে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না, যেখানে আমরা বিয়ে করতে পারব কেউ বাধা দিতে আসবে না, সেখানে গিয়ে আমরা বিয়ে করবো সুখে শান্তিতে বসবাস করবো। এখান থেকে পালিয়ে যাই চলো। কাল দুপুর বারোটার সময় রাস্তার মোড়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে, কালই আমরা সব ছেড়ে এখান থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাবো "।


অনেক ভাবলাম ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম জোনাকি খারাপ কিছু বলে নি, ঠিকই বলেছে। আমাদের ভালোবাসাকে যখন কেউ মূল্য দিচ্ছে না তখন আমরা আর এখানে থাকবো কেন এখান থেকে চলে যাব। মঙ্গলবার দুপুর ১১ টা,খুব দ্রুত আমি তৈরী হয়ে গেলাম , রাস্তার মোড় অপেক্ষা করছি, জোনাকির বারোটায় আসার কথা। দাড়িয়ে আছি তো দাঁড়িয়েই আছি।এক ঘন্টা দু ঘন্টা তিন ঘন্টা এভাবে করতে করতে একটা সময় রাত নটা বেজে গেলো তবুও জোনাকি এলোনা, হয়তো কোনো কারণে দেরি হচ্ছে এটা ভেবে দাড়িয়েই রইলাম, এভাবে রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেল কিন্তু হায় তবু আমার জোনাকি এলোনা। 

আর অপেক্ষা করতে না পেরে সকাল-সকাল ওর বাড়িতে চলে গেলাম।কিন্তু ওখানে গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে গেল মনে হলো দমটা যেন বন্ধ হয়ে আসছে, ওর বাড়ি ভর্তি লোকজন বুঝতে পারছিনা কি হচ্ছে,সবার মুখ মলিন আমাকে দেখে ওর বাবা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। তারপর যা বলল তা শুনে মনে হল আমি এখানে দাড়িয়ে আছি কিন্তু আমার প্রাণটা নাই। 

ওর বাবা বলল, "কাল সকাল সোয়া এগারটার দিকে জোনাকি কাপড়-চোপড় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। তার কিছু সময় পর কেউ একজন আমাকে ডাকতে আমার বাড়ি এলো আর বলল ভাই সাহেব আপনার মেয়ের খুব গুরুতর অবস্থা।একটা বাসের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লেগে আপনার মেয়ে —....আপনি দ্রুত হাসপাতালে চলুন। 

তারপর আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের্ অবস্থা 

একেবারেই মুর্মূষ। আমার ছোট্ট মেয়েটি খুব কষ্ট করে আমাকে ডেকে বলল বাবা গো আমি আর বেশিক্ষণ বাঁচবো না, একটা কথা বলবো তুমি আমার হয়ে আমার সাগরকে একটু বলে দেবে আমি আমার সাগরকে অনেক ভালোবাসি,, ওর কাছে আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার ভাগ্য আমার সাথে নেই, আমি ওর কাছে পৌঁছাবার আগেই মৃত্যু আমার কাছে পৌঁছে গেছে।  

 এইটুকু বলে আমার মামনিটা সারাজীবনের জন্য আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেল।বাবা গো আমি তোমাদের ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনি, তুমি আমাকে মাফ করে দিও।"


এরপর তিনি কি বলছিলেন আমি বুঝতে পারছিলাম না, জ্ঞান হারিয়ে গেছিল -.আমি গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলাম। এই শোক আমি মেনে নিতে পারছিলাম না,এই শোক আমাকে দীর্ঘ এক বছর ভুগিয়েছে ওই একটা বছর আমি বাড়িতে নয় বরং মানসিক হাসপাতালে কাটিয়েছিলাম।এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, কিন্তু মানুষের জীবন তো কখনো থেমে থাকতে পারে না। আমি এখনো আগের মতো হাসি, কাজ করি, ঘুরতে যায় কিন্তু আমার জোনাকির জায়গা আমি আজও কাউকে দেইনি।আজও আমি জোনাকিকেই পাগলের মতো ভালোবাসি আর বাকিটা জীবনও বাসবো।আমি এও জানি যে আমার জোনাকি সব সময় আমার সাথে আছে, আমাকে দেখছে, আমাকে আগলে রাখছে, আমাকে দূর থেকে বহু দূর থেকে ভালোবাসছে।

 | Kathamala - read, write and publish story, poem for free in hindi, english, bengali

  • Pen Name -
  • 2 years ago
Comments

To comment on content, please Login!

Comments & Reviews (0)

No comments yet :(