হারানো ভালবাসা
সেই দিনের কথা, যখন আসিফ আর নিলা একসাথে স্কুলে যেতো। তাদের বন্ধুত্ব অনেক দিনের ধরতে গেলে যখন তাদের বয়স পাঁচ বছর। তাদের বেড়ে ওঠা তখন থেকে। তারা খুব প্রটেক্টটিভ একে অন্যকে নিয়ে। সারাদিন এক সাথে থাকা। আগে যেখানে নিলা সেখানে আসিফ। মনে হতো চুইংগাম।আসিফের যোগাযোগ হয়না নিলার সাথে বেশ কিছু দিন থেকে। যেখানে তারা একে অন্যকে ছাড়া ভাবতে পারে না সেখানে তাদের কথা হচ্ছে না। আসিফ ভাবছে তাদের কাটানো দিনগুলির কথা। যখন নিলা প্রথম ভর্তি হয় স্কুলে, বেশ কাদঁছিল আসিফ এর জন্য।কারন সে আসিফকে ছাড়া কোথাও যেতো না। সে ছাড়া আর অন্য কোনো ফ্রেন্ড ছিল না।নিলার কিছু ভালই লাগছিল না আসিফকে ছাড়া। মন খারাপ করে বসে থাকে, কিছুখন পর কাঁদতে শুরু করে। পরে 'মেম'এসে জিজ্ঞাসা করলে বলে,'আমি বাসায় যাব।কেন?'
"দেখো এখানে কত ছেলে মেয়ে আছে।তমার সব নতুন বন্ধু, এদের সাথে খেলবে না তুমি?"
"না, আমার নতুন বন্ধু চাই না,আমার আসিফ বন্ধু আছে। পরে আরও জোরে কেঁদে বলে,'বাসায় যাব আমি'।"
বাধ্য হয়ে 'মেম' তাকে বাসায় নিয়ে যায় আর বলে, আসিফ কেও স্কুলে পাঠাতে।
বাসায় ফিরে নিলা আসিফের সাথে দেখা করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,'তুইও আমার সাথে ইস্কুল এ যাবি।'
"আসিফ চোখ মুছে দিয়ে বলে,হুমরে পাগলি যাব।"
হঠাৎ গেটে কে নক করছে। গেট খুলে দেখে নিলা, আসিফ এসেছে !এটা সপ্ন দেখছি নাকি সত্যি।
দীর্ঘ ১৮বছর পর দেখা তাদের। নিলা আর আসিফ অনার্স এর ইস্টুডেনট।একে অপরকে দেখে অবাক। নিলা আগের থেকে আরও সুন্দরি হয়েছে। একদম অপুরুপ সুন্দরি। আজ যদি তার জিএফ না থাকতো সে নিলার সাথে প্রেম করতো।
নিলা আসিফকে দেখে অবাক সে বেশ লম্বা হইসে। দেখতেও সেই স্মার্ট। যে কেও তার প্রেমে পরে যাবে।
"তানিমা বেগম বলে কে এসেছে?"
"নিলা বলে দেখে যাও,পূর্ণিমার চাঁদ এসেছে।"
তানিমা বেগম দেখে অবাক। কারন অনেক দিন পর এসেছে সে।আসো বাবা ভিতরে আসো।
নিলা খুশিতে আত্নহারা।সে কি করবে বুঝতে পারছিল না। তারা সামনা সামনি বসে আছে। কি কথা বলবে বুঝতে পারে না। তার আসিফয়ের প্রতি ভালবাসা আগে থেকে। যখন ছোট ছিল তখন বুঝতে পারেনি কিন্তু এখন সে বুঝে।
"আসিফ জিজ্ঞাসা করে,কি খবর কেমন আছ?"
"এইতো ভালই আছি, তুমি?"
"আমিও ভাল আছি, বেশ বড় হইসো।"
"কেন ছোট থাকবো নাকি সারা জীবন, তুমিও বড় হইসো।"
"তা অবশ্য ঠিক। কিসে পরছো?"
"অনার্স এ, তুমি?"
"আমিও। আগের কথা মনে আছে তোমার।"
"হুম,মনে আছে। কেন তোমার নেই নাকি?"
"আছে একটু।"
"ওহ!ভাল।"
নাস্তা এনে দেয় তানিমা বেগম। তারপর তারা গল্প করে।
পরে আসিফ বিদাই নেয়।
সে কি, তার সাথে যোগাযোগের কোন মাধ্যম দিল না।সে মনে হয় ভুলে গেছে। আবার মন মরা করে বসে থাকে সে। এতদিন পর দেখা হওয়ার পর মনে হল তারা অনেক অচেনা। তার প্রেমতো একতরফা ছিল।যা সে কখনো জানাতে পারেনি। আর পারবেও না। পড়াশুনাতে মন দেয় সে। কালকে প্রথম দিন কলেজে ।বাসায় ফিরে আসিফ নিলার কথা ভাবে। কি এক চাহনি ছিল তার চোখে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠে তার ,'রিসিভ করতেই কি কর বাবু?'
"কিছু না বসে আছি।"
"তাইলে চলো আজ রেস্টুরেন্ট এ যাই।"
এই মেয়ের আবদার অনেক। মাঝে মাঝে মনে হয় এই মেয়ে তাকে ভালবাসে না বরং তার টাকাকে ভালবাসে।
কিছু কথার পর কলেজ এ যায়।ক্লাস এ যেয়ে বসে।হঠাৎ তার চখ থমকে যায়। হাল্কা বাতাসে এক মেয়ের গুছানো চুল এলোমেলো হয়ে যায়, মেয়েটি চুল ঠিক করে।
আরে এইতো অন্য মেয়ে না এত নিলা দেখে বেশ খুশি সে।
নিলা তাকে দেখে অবাক। আশলে ভাজ্ঞে যা থাকবে তা হবে।
দুজন কথা বলে।
হঠাৎ তন্নি এসে হাজির। আসিফয়ের হাত ধরে বলে তুমি কি ভুলে গেছো আমাকে, এই মেয়ে কে?
ওর নাম নিলা আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড।
অহ!দেখ আজ আমাকে কেমন লাগছে?
আগের মতন।
তন্নি বলে তুমি এত বোরিং কেন?আজ আমি নিউ নেনপলিস লাগাইসি।
অহ, হে। ভাল লাগছে।
নিলা ওই জায়গা থেকে বিদাই নেয়।তন্নি বেশ মোডান মেয়ে। আর সে সিম্পুল একটা মেয়ে। যাই হক তার ভেবে লাভ নেই।আজও সে অনেক ভালবাসে সে তাকে।
এইভাবে চলে যায় ৬বছর।এখন আসিফ সরকারি জব করে। নিলা প্রাইমারি ইস্কুল এ পরায়। এখন নিলার বাসায় ছেলে খুঁজছে তার বিয়ে দেয়ার জন্য।
এই খবর পেয়ে আসিফ তার বাসায় জানায়। সে প্রথম দেখাতে প্রেমে পরে তার। কিন্তু সে বলে না।আর তন্নির সাথে প্রথম বর্ষে ব্রেকয়াপ করে সে যেটা সে জানতো না।
অন্যদিকে নিলা জানে সে তন্নি কে ভালবাসে। কিন্তু আজ ওতাকে পাগলের মতন ভালবাসে তাকে।
ছেলে পক্ষ আসে নিলা কে দেখতে কিন্তু ছেলে আগে তার সাথে দেখা করতেই চায়।
ছাদে যেয়ে দেখে লম্বা ছেলে পাঞ্জাবি পরে দারিয়ে আছে পিঠ ঘুরিয়ে। সে যেয়ে সালাম দেয়।
ছেলে উত্তর নিয়ে তার দিকে তাকায়। দেখে সে নিল শারি পরসে দেখতে অপুরুপ লাগছে। সে মাথা নিচু করে আছে।
নিলার হাত ধরে বলে "আই লাভ ইউ"মিস নিলা।
সে অবাক, তাকিয়ে দেখে আসিফ, সে কি সপ্ন দেখছে? নাকি সত্যি সে।
সব কিছু বলে তাকে। নিলা শুনে অবাক। আসিফ বলে, now you will marry me, mis?
নিলার চখে পানি আসে খুশির আর বলে 'yes'।
রিয়েল লাভ করলে তাকে যেকোনো ভাবে পাওয়াই যায়। অবশেষ এ তারা দুজন দুজন কে জরিয়ে ধরে। আর এক সপ্তাহ পর তাদের বিয়ে হয়। সেই ছোটবেলার প্রেম তারা এতদিনে পায়।
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(