-এই পপকর্ন নিবেন।পপকর্ন।
সেই সকাল থেকে রাস্তায় বেরিয়েছে অরি।সারা রাস্তা ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত সে।একটা পপকর্ন ও বিক্রি হচ্ছে না।আট বছরের এক ফুটফুটে মেয়ে অরি।পাতলা দেহের গড়ন।শ্যামলা গায়ের রং। আজ বাদে কাল একুশে ফেব্রুয়ারি। সবার আগে ফুলটা অরি দিবে শহীদ মিনারে। তাইতো পপকর্ন বিক্রি করে টাকা জমাচ্ছে সে।সৎ মায়ের কাছে টাকা চাইলে একটা মারও মাটিতে পড়বে না। তাই সে নিজেই কাজে লেগে গেলো।
-আপা,একটা পপকর্ন নেন। আপা নেন না।
মহিলাটি পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। ক্ষুধায় পেটে হাতুড়ি পিটাচ্ছে কেউ। কিন্তু এসব ভাবলে চলবেনা।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। কয়েকটা পপকর্ন রয়েছে। বিক্রি করতে পারলেই হলো।মাগরিবের আযান দিয়ে দিয়েছে। অন্ধকার নেমে আসছে। কত ফুলের দোকান।একটা ফুলের দোকানের দিকে এগিয়ে চললো অরি।
-ভাইয়া,আমাকে ঐ যে গোলাপের তোরা টা দেন।
-টাকা আছে?
-কত দাম?
-১৫০ টাকা।
-এতো!আরেকটু কম হয় না।ও ভাই আরেকটু কম রাখেন।
-যা তো বিরক্ত করিস না। ভাত খাইতে পায়না ফুল কিনতে আসছে।
অরি চোখের জল মুছে অন্য একটি দোকানে গেল।নিজের সাধ্যের মধ্যে থাকাই ভালো।একটা রজনীগন্ধ্যা,গোলাপ ও কিছু ঘাস ফুলের সমন্বয়ে গঠিত একটা তোরা কিনলো সে।এবার বাসায় ফিরতে হবে তাকে।পা চলছে না।এখন আর ক্ষুধা নেই।এতো অন্ধকার চারপাশে।
-কিরে সুন্দরী বাসায় যাস।
এমন একটা কথা শুনে পিছনে ঘুরে তাকায় অরি।চার-পাচঁটা বখাটে ছেলে দাড়িয়ে আছে।অরি কিছুটা হকচকিয়ে যায়।
যেই অরি দৌড় দিতে নিবে খপ করে তাকে ধরে ফেলে একটা ছেলে।
-কই যাও ফুলটুসি।আমাদের সাথে পার্টি করবা না।
-ভাই আমারে ছাইড়া দেন।আল্লাহর দোহাই লাগে ছাইড়া দেন।
-তা তো হচ্ছে না।
-হাতে দেখি ফুলও আছে।ফুলসজ্জার জন্য বুঝি।
লালগেঞ্জি পড়া এক ছেলে হাসতে হাসতে বলে উঠলো। অরিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার হাতের তোরাটা নিচে পড়ে রইল।হায়নাদের পায়ের নিচে পড়ে থেতলে গেলো ফুলগুলো।
শহীদ মিনারের পিছন হতে এক আট বছরের শিশুর লাশ উদ্ধার। ধারণা করা হয় প্রথমে গণধর্ষণ করে পরে মেরে ফেলা হয়েছে তাকে। এমন খবরে কেঁপে উঠলো সারা বাংলাদেশ। শহীদ মিনার পেলো তার প্রথম ফুল।একটা থেতলে যাওয়া ফুল।
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(