Story

বৈচিত্র্যময় দুঃখ | Kathamala - read, write and publish story, poem for free in hindi, english, bengali

বৈচিত্র্যময় দুঃখ

2 years ago

0

আদিল বাবা কোথায় যাচ্ছিস? আদিল জবাব দিলো কেন আম্মা! আমি টিউশনে মানে পড়াতে যাচ্ছি আর আজকে একটা ইন্টারভিউও আছে।  বাবা আমার ঔষুধ শেষ হয়ে গেছে আসার সময় নিয়ে আসিস। আদিল বলল ঠিক আছে আম্মা নিয়ে আসবো।  আর শোনো রান্না করে রাখছি তুমি খেয়ে নিও।  তুই কেন রান্না করলি!  লতা আজকে আসেনি? জিজ্ঞেস করলো আদিলের মা,  আদিল জবাব দেয়, না আম্মা লতা খালা আর আসবে না, আসলে ওনারতো গতো দু-মাসের টাকাও দিতে পারিনি এসব বলেই আদিল বেরিয়ে যায়। আদিল মধ্যবিও পরিবারের ছেলে, সব ভালই ছিল কিন্তু গতো বছর তার বাবা যাওয়ায় সব উল্টো পাল্টা হয়ে যায়, তার  বাবা ছিল স্কুল  শিক্ষক অবশ্য স্কুল থেকে কিছু টাকা পাওয়ার কথা,  আজ পাবে কাল পাবে বলে পাওয়াই হচ্ছেনা।  এখন আদিল আর তার অসুস্থ মা, সে -তো প্রতিদিন-ই ইন্টারভিউ দেয় কিন্তু চাকরি আর হচ্ছেনা,তিনটে টিউশন করিয়ে কোনরকম চলছে। তবে হ্যা এতকিছু খারাপের মাঝে তার একটা ভালো লাগার মানুষ আছে। যার কাছে গেলে সে মানসিক শান্তি পায়। আদিল প্রতিদিন -ই তার কাছে দুনিয়া সমান হতাশা নিয়ে যায় আর ফিরে আসে একবুক ভালবাসা নিয়ে। আদিলের সেই ভাল বাসার মানুষের নাম আয়েশা ইসলাম, ছোট নাম আশা, আশার বাবা ওদেরকে ছেড়ে চলে যায় আরেকটা বিয়ে করে, মা আছে আর এক ছোট ভাই আশা -ই তার মা আর ভাইকে নিয়ে আছে, আশা একটি ছোট খাটো কম্পানিতে জব করে। এই আশা-ই আদিলের মানষিক প্রশান্তি। আরে এইতো আশা চলে এসেছে, এবার পার্কের ঐ বেঞ্চেটাতে বসবে। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলেকে ডাকবে আর তার থেকে বদাম নিবে । আশা ছেলেটাকে ডেকে বাদাম নিলো আর অনেক আগ্রহ নিয়ে আদিলের পথ চেয়ে রইলো, আসলে আশাতে জানে আদিল প্রতিদিন -ই দেরি করে আসে। আদিল এসে পিছন থেকে আশার চোখ জোড়া চেপে ধরে, আশা না চমকে বলে ইন্টারভিউ কেমন হলো স্যার? আদিল বলে কিভাবে বুঝলে যে আমি এলাম!  তুমি আমার আশে-পাশে আসলে তোমার হাঁটা, তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধটা আমাকে জানান দেয় যে তুমি এসেছো উওর দেয় আশা।  আদিল মুচকি একটা হাসি দেয় আর বলে ইন্টারভিউর কথা জিজ্ঞেস করছিলে না?  মনে হয় না আজকেও কিছু হবে , আর ভাল লাগছেনা ইন্টারভিউ দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।  আশা বলে কেন এতো চিন্তা করছো?সব ঠিক হয়ে যাবে, আসলে চাকরি হলেইতো তুমি আমাকে বিয়ে করবে, আসলে আল্লাহ জানে আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা তাই তোমার চাকরিটাও হচ্ছেনা।   তুমি কিভাবে এতো শান্ত থাকতে পারো? বলে আদিল। আমি পারি তুমিও পারবে বলে আশা। আচ্ছা আন্টি কেমন আছে?  আম্মা আছে আগের মতই, আর লতা খালাও আজ থেকে আর আসছে না জানো-ইতো সব বলে   আদিল। আশা বলল তোমাকে কতো করে বললাম আমার থেকে থেকে কিছু টাকা নাও, না তুমিতো নিবেনা আরে আমি কি টাকাটা একেবারে দিচ্ছি নাকি ধার হিসেবে দিচ্ছি পরে সুদ সমেত নিয়ে নিবো। আদিল বলে আচ্ছা বাদ দাও তুমিও কিভাবে সব চালাচ্ছো আমি জানি আমি চাইনা তুমি বাড়তি কোন কষ্ট করো,  চলো সামনে হাঁটি। দু'জন  বাদাম খেতে খেতে হাঁটতে থাকে। এভাবেই যাচ্ছিলো সময় তাদের ভালবায়,হঠাৎ একদিন আদিলের কল আসে যে তার চাকরি হয়েছে আর সে যেন কাল থেকেই জয়েন করে।  আদিলতো খুব খুশি সে তার মা -কে খবরটা দিয়েই চলে যায় আশার কাছে তার অফিসে।  আশাকে সামনে পেয়ে তার হাত দুটি ধরে তাকে ঘুরাতে থাকে আর বলে চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি আশা।  আশা থমকে যায় খুশিতে তার চোখ ভিজে আসে, সে আদিলকে জড়িয়ে ধরে বলে আলহামদুলিল্লাহ।  ওদের সময় এখন আরো ভাল যাচ্ছে, দিন দিন প্রেমটা যেন বেড়েই চলেছে। ওদের দেখলে মনে হয় এক আত্মা আর দুই দেহ।  এখনতো আদিল-ই দেখা কারার জন্য আগে এসে বসে থাকে সেই পার্কে, তাদের কোন কিছুই পাল্টেনি শুধু এখন আর আগের ঐ হতাশাটা নেই।আদিল বাদাম হাতে বসে আছে, আশা এসে পাশে বসতেই আদিল বাদামের হাতটা বাড়িয়ে দেয়।  আশা বলে কি হলো তোমার চোখ, মুখ এমন লাগছে কেন? আদিল বলে কেমন লাগছে?  আশা উওর দেয় খুব খুশি মনে হচ্ছে! আদিল এবার আশার পায়ের কাছে বসে বলে আমাকে,,,,,আমাকে অফিস থেকে গাড়ি দিয়েছে৷  আশাকে টেনে নিয়ে গাড়িটি দেখায় আশার মুখ দেখেই আদিল বুঝতে পারছে আশা কতোটা খুশি।  আদিল বলে চলো গাড়িতে উঠো তোমাকে নিয়ে ফুরোটা শহর ঘুরবো।  তবে হ্যা তুমি কাল ছুটি নিয়ে রাখবে আমি, মা, তুমি, তোমার মা আর ভাইসহ কাল সবাই মিলে ঘুরবো। আশা বলে ঠিক আছে কালই যাই আজ কেন?  আর আমার বাড়িতে কাজও আছে।  আদিল আশার কথা শুনেনা দু'জন গাড়ি করে ঘুরছে  আর গান বাজছে। সারাদিন খাওয়া, কেনাকাটা সব শেষে বাড়ি ফিরছে আশার বাড়ির রাস্তায় ডুকতেই একটি ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট করে আদিলের গাড়ি।  আদিলের জ্ঞান ফিরতেই দেখে সে হাসপাতালের বেডে, উঠেই সে আশাকে খুঁজতে থাকে। সামনে তার মা আর আশার মা বসা।  আদিল বলে মা, আন্টি আশা কোথায়?  ও কেমন আছে? আশার মা এবার হাও মাও করে কেঁদে ওঠে আর বলে আশা আর নেই বাবা।  একথা শুনে আদিল চিৎকার করে বলে উঠে, না এটা হতে পারেনা এসব মিথ্যে। ডাক্তার আদিলের চিৎকার শুনে আসে আর বলে আপনি কি করছেন চিৎকার করবেননা আপনার ক্ষতি হবে আজ তিনমাস পর আপনার জ্ঞান পিরেছে। আদিল বলে কি বললেন তিনমাস!  আদিলের মা বলে হ্যা বাবা তিনমাস, আসলে সেদিনের এক্সিডেন্টে আশা ওখানেই মারা যায় আর তুই এই তিনমাস এই হাসপাতালে অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিলিস।  আদিলতো আশার মৃত্যুর খবর শুনে পুরো পাগলের মতো হয়ে যায়। আর বলতে থাকে আমি কেন সেদিন তোমার কথা শুনিনি,কেন আমি তোমাকে জোর করে নিয়ে গেলাম সব আমার জন্য হলো। আদিলের পাগলামি দেখে সবাই এবার তাকে আশার কবরের কাছে নিয়ে  যায়।  আদিল আশার কবরে বসে খুব কাদেঁ । সেতো কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করে পারেনা ।  তার মা এবং আশার মা ভাইয়ের কথা চিন্তা করে নিজেকে সামলায়।  কিন্তু আদিল প্রতিদিন আশার কবরের কাছে দশ টাকার বাদাম নিয়ে যায় আর দুই ঘন্টা তার সাথে কথা বলে। সব ভালবাসার সমাপ্তি সুখময় হয়না, দুঃখটাও অনেক সময় সুখ হিসেবে ধরা দেয়।

Comments

To comment on content, please Login!

Comments & Reviews (0)

No comments yet :(