Story

পুতুল | Kathamala - read, write and publish story, poem for free in hindi, english, bengali

পুতুল

2 years ago

0

বাংলা ছোটগল্প রচনা প্রতিযোগিতা ২০২২


"পুতুল"
✍🏻উজ্জ্বল সামন্ত

বছর পনেরো হলো অরুণিমা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় উচ্চবিত্ত পরিবারে। স্বামী , শ্বাশুড়ি শ্বশুর, পুত্র নিয়ে ভরা সংসার। অরুণিমা অপরূপা। বিবাহের আগে কলেজ লাইফে একটা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ছিল। কিন্তু প্রেমিক বিদেশে কর্মরত হওয়ার পর আর কোন যোগাযোগ ছিল না। এদিকে বিবাহের পরই সংসারে নিত্য অশান্ত লেগেই থাকতো। শ্বাশুড়ি মা গত হয়েছেন। শ্বশুর মশাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত । দু বছর হলো বিছানায় শয্যাশায়ী। স্বামীর সঙ্গে অরুণিমার সম্পর্কে দিন দিন তিক্ততা বেড়েই চলেছে। সংসারের দায় দায়িত্ব থেকে এখন অব্যাহতি পেতে মন চায় অরুণিমার । অরুণিমার লেখালেখি ছাড়াও অনেক শখ ছিল। কয়েকটি বইও প্রকাশ হয়েছে ওর। সংসারের নিত্য ভাঙনে লেখা হয়তো প্রাণ সঞ্চার করতো । ফেসবুক এ ওর প্রোফাইলে হাজার হাজার ফলোয়ার । হঠাৎ ওর মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ এলো, কেমন আছো? মেসেজে প্রেরকের প্রোফাইল খুলে চমকে গেল অরুণিমা। আরে এ তো অনিমেষ। ওর এক্স। হঠাৎ করেই যোগাযোগ করল কেন? নানা প্রশ্ন মনে উঁকি দিয়ে যায়। এক সময় রিপ্লাই দেয় , ভালো। এর পর মেসেজের মাধ্যমে কথা হয় । ফোন নং চাইলো অরুণিমা। আই এস ডি কল বা হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারেই লিখেও কথা হতো। হঠাৎ অনিমেষ বললো দেশে ফিরবে সামনের মাসের মধ্যেই। দেখা করতে চাইলো অরুণিমার সাথে। অরুণিমা বললো, কি হবে, দেখা করে? প্রত্যুত্তরে অনিমেষ উত্তর দেয় দেখা হলেই বলবো। বিদেশ থেকে কি আনবে আমার জন্য? অনিমেষ বললো সারপ্রাইজ গিফট, বলা যাবে না। হঠাৎ করেই শ্বশুর মশাইয়ের শরীর খারাপ করলো। নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলো। ডাক্তারবাবু খুব একটা আশার বাণী শোনালেন না। উনি কোমায় চলে গেছেন। কবে জ্ঞান ফিরবে বলা যাচ্ছে না। দিন পনেরো পর বাড়ি ফিরিয়ে আনা হল। অরুণিমা বর অভিষেক ব্যবসায়ী। কাজকর্ম শিকেয় তুলে বাবার সেবা শুশ্রূষা করছে দুই বছর যাবৎ । অরুণিমা আগেই জানিয়ে দিয়েছে ওসব দেখাশুনা করতে পারবে না। এমনিতেই সংসারে শান্তি নেই, আয়া দেখাশোনা কি, কেমন করবে , এইভেবে অভিষেক ই দ্বায়িত্ব নেয়। হঠাৎ অনিমেষের ফোন আসে। একদিন সন্ধ্যায় অভিজাত কফি শপে বসে আছে অরুণিমা। দূর থেকে একজন সুদর্শন পুরুষ হাত নাড়লো। অনিমেষ , পাশে বসল। ব্লাক কফি অর্ডার করলো। দু জনে দুজনের চোখে দিকে তাকিয়েই রয়েছে। কি অপূর্ব লাগছে অরুণিমা তোমায়। ১৮ বছর পর দেখা। কিছুক্ষন কথাবার্তা হলো। অরুণিমা কে দামি উপহারও দিলো অনিমেষ। এর আগেও অনলাইন স্টোর থেকে বহু গিফট পাঠিয়েছে অরুনিমা কে । ওখান থেকে বেড়িয়ে একটি বড় কটেজে দুজনে গেল। রাত গভীর হলো, ঘনিষ্ঠ হলো ওরা। গাড়িতে করে অরুনিমা কে বাড়ি অব্দি ছেড়ে দিল অনিমেষ। 
 অরুনিমা কে মেসেজ এ জানিয়ে দিল, আর্জেন্ট কাজ এসে গেছে, পরদিন ভোর এ বিদেশ চলে গেল।
এর পর মেসেজের মাধ্যমে কথা হয়। অরুনিমা ফ্যাশনিসট। আধুনিক নিত্য নতুন গহনা, পোশাক এইসব অর্ডার করে আর তার বিল অনিমেষের ক্রেডিট কার্ড থেকে পেমেন্ট হয় লক্ষ লক্ষ টাকার জিনিস। কখনো কখনো অনিমেষ বিদেশ থেকে দামী দামী উপহার পাঠায়। বেশ চলছিল এরকম দু'বছর। একদিন অনিমেষের স্ত্রী বাড়িতে ছিল। ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট না হওয়ায় ব্যাংকের লোক বাড়ি পৌঁছে যায়। অনিমেষ স্ত্রী খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে যেসব আইটেম কেনা হয়েছে তার ম্যাক্সিমামই লেডিস আইটেম। অনিমেষ বাড়ি ফিরলে ওর সঙ্গে তুমুল বাকযুদ্ধ শুরু হয়। শেষমেষ অনিমে স্বীকার করতে বাধ্য হয় তার এক্স-গার্লফ্রেন্ডের জন্য এগুলো কিনেছিল। এদিকে হঠাৎ অনিমেষের মেসেজ আসা বন্ধ হয়। এত মেসেজ কল করার পরও কোন উত্তর আসে না। অরুনিমা চিন্তায় পড়ে যায়। অরুনিমার স্বামীর কাছে তাঁর স্ত্রীর গোপন সম্পর্ক অজানা ছিল না। কারণ অনিমেষ যেদিন ওকে ছাড়তে এসেছিল মাঝরাতে, ব্যালকনি থেকে ও ব্যাপারটা দেখে নিয়েছিল। এই নিয়ে অরুনিমার সঙ্গে কথা বললে সংসারের তুমুল অশান্তি শুরু হয়। চিৎকার-চেঁচামেচিতে সামাজিক সম্মানহানি না হয় , তাই অভিষেক চুপ করে যায়। হ্যাঁ বহুদিন মুখ বুজে এই ভাবেই সহ্য করে আসছে । অভিষেকের একটাই ভয় মান সম্মান। আজ অরুনিমা যে একজন বিশিষ্ট লেখিকা, সমাজের কিছু জন জানে ,চেনে তা কেবল অভিষেকের জন্যই। রাতের পর রাত জেগে অভিষেক অরুনিমার জন্য লিখে গেছে পাতার পর পাতা। উপন্যাস ,গল্প । একটার পর একটা বই প্রকাশ ও পাঠক লেখক সমাজে তার সম্মান একমাত্র তার স্বামী অভিষেকের জন্য এটা অজানাই রয়ে গেছে সবার কাছে। অভিষেক ও কাউকে কোনদিন জানতে দেয়নি। হয়তো পাপেট হয়েই থেকে যাবে আমৃত্যু , সামাজিক মান-সম্মানের ভয়ে....

 | Kathamala - read, write and publish story, poem for free in hindi, english, bengali

  • Pen Name -
  • 2 years ago
Comments

To comment on content, please Login!

Comments & Reviews (0)

No comments yet :(