Story

নির্জন গলির মুখে

2 years ago

0

 নির্জন গলির মুখে

অনিক চক্রবর্তী

শব্দ সংখ্যা: ৩৫২

বাংলা ছোটো গল্পঃ রচনা প্রতিযোগিতা ২০২২


কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাত্রি, কলকাতার নিস্তব্দ জনপথে একরাশ শূন্যতা ব্যতীত কিছুই নেই। প্রচণ্ড শীতে কাক পক্ষিও বুঝি বাড়ির ছাদের কার্নিশের তলায় অথবা গাছের ডালের এককোনে তৈরি বাসায় নিশ্চিন্তে পরম সুখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। ফুটপাতের গাঁয়ের স্ট্রিট লাইট গুলো ক্ষীণ ভাবে আলো ছড়াচ্ছে। হন্তদন্ত হয়ে বাড়ী থেকে বেরিয়ে আমি অনুসন্ধান করছি খাদ্যের। বাড়িতে মা ঠান্ডা লেগে জ্বর বাঁধিয়েছে, একশ তিন ডিগ্রি জ্বর, বাবা বাড়িতে ক্রমাগত মায়ের সেবা শুশ্রূষা করে যাচ্ছেন মাথায় জল পট্টি দিয়ে। যার দরুন হাড়ি চরেনি রান্না ঘরে আজকে। এই কয়েকদিন হাত পুড়িয়েই আমি নতুবা বাবা পালা করে হেসেলের দিকটা সামলে সুমলেছি, কোনো রকমে ভাতে ভাত ফুটিয়ে আহার করা যাচ্ছিলো। কিন্তু হাড়িতে আজ চাল বাড়ন্ত। শত কাজ ও দুশ্চিন্তার মাঝে সেসব আমরা বেমালুম ভুলেই গেছিলাম, তাই বাবার কাছ থেকে নগদ কিছু নিয়ে বাইরে থেকে রুটি তরকা কেনার তাগিদে বেরিয়ে পড়েছি। বেশ খানিকক্ষণ হেঁটে গেলে একটা শুনশান অন্ধকারাচ্ছন্ন গলি পেরিয়ে যেতে হয়, সেইখানেই ভয়। ওই গলির ভিতরে একটা বহু পুরনো ধূলিসাৎ বাড়ী আছে,যেখানে শুনেছি দুই দম্পতির বসবাস ছিল। কি কারণে একদিন দুজনকেই সিলিংএ পাখায় সাথে গলায় ফাঁস সমেত ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। অপঘাতে মৃত্যু, নিছক ব্যপারটা উড়িয়ে দেওয়া যায়না! ওই দিকে আলো নেই। এমন জনহীন রাস্তায় ভুল বশত যদি কিছু একটা অঘটন ঘটে তবে আর রক্ষা নেই, কোনো ক্রমে গলি পেরিয়ে মোড়ের মাথার রুটির দোকান থেকে সেটা সংগ্রহ করে চম্পট দিতে পারলেই রক্ষে। টলতে টলতে ওই পথ অতিক্রম করছি হঠাৎ আমার দুই পায়ের ফাঁক গোলে একটা মিশমিশে কালো বেড়াল বেরিয়ে গেলো যদিও সেটা টের পেলাম তার ম্যাও ডাক শুনে। আমার থেকে পাঁচ ছয় হাত দূরে দাঁড়িয়ে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রইল খানিকক্ষণ। সেকি দৃষ্টি শিহরণ জাগিয়ে তোলে, ফিকে সবুজ রঙের আভা ঠিকরে বেরোচ্ছে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে পাশের সেই কুখ্যাত বাড়িটির ভিতর মন্থর চালে ঢুকে গেলো। আমার কেমন যেন ভয় ভয় করছিল, বারে বারে মনে হচ্ছিল এই বুঝি খোলা জানলার অন্তরাল থেকে কেউ উকি মারছে, ভুত থাকুক বা না থাকুক অন্ধকারে সাপ খোপের অবাধ বিচরণ, সমুহ বিপদ মাথায় করে এগিয়ে চলেছি। যাইহোক কোনো ক্রমে নিরিবিলি এই গলির মুখ পেরিয়ে যেতে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম, মোড়ের মাথার বিহারী চাচা তখনও গরম গরম রুটি বানাচ্ছে, কবজি উল্টে দেখি রাত্রি সাড়ে এগারোটা।সেটা নিয়ে ওই পথে আর অতিক্রম না করে স্টেশনের রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ী ফিরে নিশ্চিন্ত হলুম।


          __________

Comments

To comment on content, please Login!

Comments & Reviews (0)

No comments yet :(