আমার বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু তুমি,
হৃদয় মাঝে অনুপ্রেরণা আমার।
বঙ্গবন্ধু তুমি,
স্বাধীন করেছে বাংলার ফসল খামার।
বঙ্গবন্ধু তুমি,
তরুণ প্রজন্মের হৃদস্পন্দন।
বঙ্গবন্ধু তুমি,
নতুন দিনের স্বপ্নক্ষণ।
বঙ্গবন্ধু তুমি,
সোনার বাংলা গড়ার আন্দোলন।
খুব দীর্ঘ নয় তবে করুন বাংলাদেশের ইতিহাস। চরম প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করেছি।১৯৭১সালে যে মহানায়ক এর হাত ধরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে তিনি হলেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্স টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা এক ‘খোকা’। হ্যাঁ ‘খোকা'। মা-বাবা তাকে আদর করে ডাকতেন ‘খোকা’ নামেই। ‘খোকা’ নামটা যেমন অতি সাধারণ,তেমনি এই সাধারণ নামধারী মানুষটি ছিলেন অতি অসাধারণ এবং অনন্য প্রকৃতি। মানুষের কষ্টে ব্যথিত হতেন ছোটবেলা থেকেই। নিজের গায়ের চাদর খুলে দিয়েছেন পথের শীতার্ত মানুষকে। গরীব সহপাঠীকে খেতে ডেকে এনেছেন নিজের বাড়িতে।
সময়ের ব্যবধানে 'খোকা’ বড় হয়ে উঠলো। দেশের পরাধীন এবং অধিকার বঞ্চিত মানুষের জীবন তাকে ভাবিয়ে তুলল।দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, মাওলানা হামিদ খান ভাসানী ও হোসেন সোহরাওয়ার্দী এর মত দক্ষ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে তিনি রাজনৈতিক দীক্ষা অর্জন করেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সালে নিজের রাজনৈতিক দক্ষতা,বিচক্ষণতা এবং দৃঢ়তা প্রদর্শনের মাধ্যমে 'খোকা' পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটান বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের।
১৯৬৯ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি অর্জন করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি। হ্যাঁ, এই ‘খোকা’-ই হলো বাঙ্গালী জাতির মহানায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান বলে অথবা লিখে উপস্থাপনা করার অপেক্ষা রাখেনা। বাংলাদেশের সকল নদী-নালা ও সবুজ শ্যামল শস্য ক্ষেত তাঁর অবদানের সাক্ষী।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমান তরুণ সমাজের কাছে একজন রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৬ এর প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দাবি, ১৯৬১ এর ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ' গঠন, ১৯৬২ এর জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন, ১৯৬৬ এর ‘ছয় দফা' দাবি, ১৯৬৯ এ ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ, ১৯৭০ সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় অর্জন,১৯৭১ এর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৫ মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা তরুণ প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর শাসনামলে দেখিয়েছেন যুগান্তকারী সাফল্য। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ১২ মার্চ ১৯৭২ ভারতের মিত্র বাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ, ১ মে ১৯৭২ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ঘোষণা, ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭২ বাংলাদেশের প্রধান সংবিধানে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষর, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ তারিখ থেকে বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর , ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭২ মুক্তিযদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের কথা ঘোষণা ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের তাৎপর্যপূর্ণ কার্যক্রম।যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু নিজ তত্বাবধায়নে সমৃদ্ধ করে তুলছিলেন।
কিন্তু ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধু নিজ বাসভবনে চক্রান্তকারীদের প্রত্যক্ষ মদদে সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী বিশ্বাসঘাতক কর্মকর্তার হাতে সপরিবারে নিহত হন। ঘাতকরা শুধু ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করতে পেরেছিল তাঁর মহান আদর্শকে নয়।
বঙ্গবন্ধু তাঁর ৫৫ বছরের ক্ষুদ্র জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় কারাগারে অতিবাহিত করেছেন। পাকিস্তানি শাসকের মিথ্যা মামলার দায়ে বারবার শোচনীয়ভাবে গ্রেফতার ও নির্যাতিত হয়েছেন। তবুও অকুতোভয় এই মহান নেতা অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনোই আপোষ করেননি।জেল-জুলুম, নির্যাতন উপেক্ষা করে নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার প্রবল সাহস ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ভালবাসা বাংলার তরুণ প্রজন্মকে প্রতিটি পদক্ষেপে সাহস যোগায়। চলার পথে বাধা পেলে আজও তরুণদের কানে বেজে ওঠে ৭ মার্চের সেই অমৃত অবিনাশী কণ্ঠস্বর_
“দাবায়ে রাখতে পারবা না..... এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামী তরুণের কাছে বঙ্গবন্ধু অমর। কবির ভাষায় _
“সে বেঁচে আছে,সে জেগে আছে-
মৃত্যুই গতায়ু আজ,
সে নয় কখনোই।”
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(