অসমাপ্ত প্রণয়
নূসরাত জাহান নাদিয়া
দুপুরের তীব্র রোদ , বাতাসের তীব্র গন্ধ আর কখনো বিচ্ছিন্ন আবার কখনো অবিচ্ছিন্নভাবে অবিরাম ছুটে চলা আকাশের মেঘগুলো নিত্যদিনকার মতোই তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল সেদিন। তবুও সেদিনকার সেই নিত্যদিনকার সাধারণ পরিবেশটা অসাধারণ হয়ে ধরা দিয়েছিলো নিশুর সন্নিকটে। "অপেক্ষা" , এই অপেক্ষা নামক মুহূর্তটি হঠাৎ কোনো এক প্রাপ্তির নেশায় অতিক্রম করে যায় নিশুর মনপ্রাণ। বহু অপেক্ষা ও প্রতীক্ষার মাঝে সেদিন প্রিয় মানুষটাকে একটিবার দেখার আশায় নিশু গুনছিল প্রতিটা সেকেন্ড আর মিনিট। নিশু মানুষটা অপেক্ষা নামক জিনিসটাকে খুব একটা আপন করে নিতে পারে না বলে অপেক্ষা করে না কোনো কিছুর প্রাপ্তিতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে। কিন্তু! কিন্তু! কিন্তু সেদিন অপেক্ষা নিশুকে জড়িয়ে রেখেছিলো প্রতিটাক্ষণ। নিশু প্রিয় মানুষটার জন্য অপেক্ষায় রইল। প্রিয় মানুষ! নাহ্ সে বোধহয় নিশুর প্রিয় নয় বরং প্রিয় শব্দটিকে অতিক্রম করে বহুদূর এগিয়ে গেছে সে। নিশুর সকল ভাবনার মাঝে সহসা দেখা পায় তার প্রিয় মানুষটির। ঐতো ফিরোজ আসছে। কি অপূর্ব সুন্দর ফিরোজ! নিশুর অনুভূতির শহরে শুরু হয়েছিলো উত্তাল ঝড়। সেই ঝড়ের বর্ণনা দেওয়া নিশুর পক্ষে বোধহয় কখনোই সম্ভব নয়। অবশেষে দেখা হলো নিশু এবং ফিরোজের।
মুখে চওড়া হাসি দিয়ে ফিরোজ এসে ধরলো নিশুর হাত। কেমন এক শিহরণ বয়ে গেলো নিশুর প্রাণজুড়ে! ভালোবাসা বোধহয় এমনি হয়। ফিরোজের মুখের হাসিতে লুকিয়ে ছিল অজানা এক রহস্য। সেই রহস্যের সমাধান খুঁজতে গিয়ে নিশু হারিয়ে গেলো ফিরোজের শহরে। নিজেকে আর খুঁজেনি নিশু তার নিজের শহরে। বেশতো লাগছিল তার শহরে হারিয়ে গিয়ে। আজ বোধহয় পূর্ণতা পেলো তাদের প্রণয়।
বেশখানিক সময় একসাথে কাটালো তারা। অতঃপর সময় এলো বিদায়ের। নিশুর থেকে বিদায় নিয়ে ফিরোজ হাঁটা শুরু করলো মেইন রাস্তার ধার ঘেঁষে। নিশু আনমনে তাকিয়ে রইলো ফিরোজের পানে। নিশুও এবার হাঁটতে শুরু করলো। হঠাৎ সে শুনতে পেলো ফিরোজের চিৎকার। নিশু আঁতকে উঠলো। নিশু সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকালো ফিরোজের দিকে। মালবাহী একটি ট্রাক ধাক্কা দিয়ে ফিরোজকে আহত করে চলে যায় দ্রুত গতিতে কিন্তু! কিন্তু ফিরোজ পড়ে থাকে রাস্তায়। রাস্তা টকটকে লাল রক্তে ভেজা। ফিরোজের হলুদ পাঞ্জাবিটা ভিজে আছে রক্তে। নিশু নির্বাক। আশেপাশে লোকজন ভিড় করেছে কিন্তু কেউ ফিরোজের কাছে যাচ্ছে না। আজ সবাই দর্শক। নিশুর চোখ ভিজে ওঠে। দৌঁড়ে যায় ফিরোজের নিকট। বহুবার নিস্তেজ কণ্ঠে ফিরোজকে ডাকে সে। কিন্তু ফিরোজ সাড়া দিলো না। নিশু পাথর হয়ে বসে রইলো ফিরোজের মুখপানে চেয়ে। নিশু ভারী কণ্ঠে বলে ওঠে,
আমাদের অসমাপ্ত এই প্রণয়ে আছে বিষাদের নামহীন শিরোনাম।
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(