Story

নীলান্জ্ঞনা

2 years ago

0
নীলু, ও নীলু শুনে যা তো।
-জ্বি! খালা বলেন।
- কাজে আসতে তোর একদিন ও দেরি হয়না অথচ মাইনে চাইতে তোর দেরি হয়।
- আপনি চাইবার আগেই দিয়ে দেন আমার চাইবার প্রয়োজন হয় না।
...............................
এভাবে কিছুক্ষণ মা,মণির সাথে কথা বললো। মণি হলো আমাদের বাসার কাজের বুয়া। বয়স ২৭ কি ২৮ হবে। মণি তার আসল নাম না, তার একটা সুন্দর নাম আছে। নীলাঞ্জনা! আমি তাকে ভালোবেসে মণি ডাকি। মণির ১৩ বছরের একটা ছেলে আছে।২ বছর যাবৎ মণি আমাদের বাসায় কাজ করছে। তার কথা শুনে বোঝাই যাবে সে একজন কাজের লোক। নাহ্ আমি বলছি না যে কথায় বোঝা যায় যে সে একজন কাজের লোক, তবে সাধারণত কাজের লোকদের মুখের ভাষা তেমন একটা ভালো হয় না। মণির কন্ঠস্বরকে যেন সুরকারও হার মানাবে এতো সুন্দর। কথা বলার ধরন ও অনেক সুন্দর। গায়ের রং টা চাপা তবে চেহারায় মায়া ভরা। মাত্র ১৫ বছরেই মণির বিয়ে করতে হয়েছিো।ছাত্রী হিসেবে সে খুবই ভালো ছিলো কিন্তু পারিবারিক আয়ের সাথে তার মেধা হেরে যায়। বিয়ের পর অনেক কষ্টে ssc পরীক্ষা দিয়েছিল। স্বামী মানুষটা ভালো তবে শশ্বুর বাড়ির লোক ভালো ছিলো না।বিয়ের পাঁচ বছর পর একটা দুর্ঘটনায় অনেক খারাপ অবস্থা হয়ে যায় মণির স্বামীর। শশ্বুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় তখন মণির স্বামীকে। মণি তার স্বামী
আর ছোট্ট বাচ্চা টাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। মণি তারপর কাজে নেমে পড়ে। মাইনের অর্ধ্বেক টাকা স্বামীর চিকিৎসায় যেত।খেয়ে না খেয়ে মণি মানুষের বাসায় কাজ করতো। ছেলেকে স্কুলে পাঠালো। এভাবেই সমাজের মানুষের সাথে লড়াই করে মণি চলতো। আমার বাবা দিল্লি থাকে,মা একটি সরকারি স্কুলের প্রধাণ।কাজের সুত্রে দুজনেরই বাইরে থাকতে হয়।মা একজন বিশ্বস্ত লোক খুঁজছিলো। ঠিক তখন ই মণি আমাদের বাসায় আসে। আমার মা, মণি কিছু প্রশ্ন করে বললো,"কাল থেকে এসো"। সকালের রান্না টা মা ই করে আমার জন্য দুপুরের রান্না এছাড়া ঘরের যাবতীয় কাজ মণি করে। আমি সারাদিন ঘরে একাই চার দেয়ালের মাঝে থাকি,একজন সাথী থাকলে সময় ভালো কাটবে এই ভেবে মনে মনে খুশি হলাম। পরের দিন সময় মতো সে বাসায় চলে আসে। আমি খাটের ওপর বসে রয়েছি চুপ করে। সে এসে ঘর গোছালো, ঝাড়ু দিলো ইত্যাদি কাজ করলো। দুপুরের রান্না করলো। ২ টা বাজে তখন সে আমাকে ডাকলো। সকাল থেকে সে একটা কথা ও বলে নি আমার সাথে। পরে যেচে আমিই গেলাম কথা বলতে গেলাম।
- তোমার নাম কি?
-নীলাঞ্জনা!
- আমি তোমাকে কি ডাকবো?
- বলো কি ডাকবে?
- মণি!
-আচ্ছা! ( হাসিঁ মাখা মুখ নিয়ে)
এভাবে কথা বলতে বলতে আমার খাওয়া হয়ে যায়। খাবার যখন উঠাতে গেলো বললাম, তুমি খাবে না? সে আমার দিকে তাকিয়ে কেদেঁ দিলো।
ভাবলাম ভুল কিছু বললাম নাকি! সে আঁচল দিয়ে লাল চোখের পানি মুছে বললো, " আমার কথা ভাবলে?" আমাদের মতো মানুষের কথা কি কেউ ভাবে! আমি তখন তাকে বসিয়ে খাবার বারলাম যদিও ঠিক মতো বারতে পারি না খাবার। খাবার বেরে বললাম "খাও"!
সে খাবেই না, কিছুটা জোর করেই খাওয়ালাম তাকে।তারপর আমি চলে গেলাম কোচিং এ। মণি রাতের রান্না করে চলে যায়। পরদিন মা থাকতে থাকতেই মণি চলে আসে। মা বললো,"তুমি দুপুরে রান্না করে খাওনা কেন? এভাবে না খেয়ে কাজ করলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।গতদিনের মতো আজ ও সে কেঁদে ফেললো। মা তার মাথায় হাত দিয়ে বললো, " আমি হলাম এই বাড়ির কত্রী, পরিবারের সকলের ভালো রাখার দায়িত্ব আমার। আর এখন তো তুমি এই পরিবারের সদস্য। " এভাবে মণি অাস্তে আস্তে আমাদের কাছের মানুষ হয়ে যায়।
কথায় কথায় একদিন জানালা মণির ছেলে নাকি ভালোই মেধাবী আমার বয়সী। মাকে বললাম, বিকেলে মণির ছেলে আমার সাথে পড়লে কেমন হয়? মা বললো ভালোই! নীলুর সব টাকা তো স্বামীর পিছেই যায়।মণি কে মা বললে মণি প্রথমে একটু সংকোচ বোধ করে পরে রাজি হয়ে যায়। এভাবে দিন যায় দিন অাসে দিন যায়.....
১০ বছর পর----
হঠাৎ একদিন বাসায় এসে শরীর অনেক খারাপ হয়। সাথে সাথে হসপিটালের নিয়ে যায়। ডাক্তারের মুখ দেখে ভালো কিছু মনে হলো না। শুধু দেখলাম মণি আঁচল দিয়ে মুখ মুছছে। মাকে অনেক জোরাজুরির পর জানতে পারলাম আমার কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে। Emergency অপারেশন করতে হবে নাহলে কিছু আর করার থাকবে না। কিডনি পাওয়া এতো সহজ না তারউপর আমার ব্লাড প্রেশার আছে, ব্লাডগ্রুপ (AB-) ডাক্তার আশা ছেরে দিলো। শেষ মুহূর্তে একজন ডোনার পাওয়া গেলো। কিন্তু ডোনারের পরিচয় নাকি অজ্ঞাত থাকবে। অপারেশন শুরুর আগে সকলের সাথে দেখা করতে দিলো। মা-বাবার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সবাই সাহস দিলো অনেক। কিন্তু মণির কথার কোন অর্থ খুঁজে পেলাম না।সে বললো, " আমার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও তোকে আমি বাঁচাবো।" আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবে অপারেশন হয়ে গেলো। ১২ ঘন্টা পর বেডে দেয়া হলো আমায়। সবাই আসলো কিন্তু মণিকে দেখলাম না কোথাও।
মা! মণি কোথায়?
জানি না রে তোর সাথে দেখা হওয়ার পর আর দেখলাম না।
সবাই চলে যাওয়ার পর একজন নার্স আমাকে এক টুকরো কাগজ দিয়ে বললো, এটা তোমাকে একজন দিতে বলেছিলো।
চিঠি টা পড়তে গিয়ে আমার বুকটা ফেটেঁ গেলো।
--আমি আর কতদিন ই বা বাঁচবো, তোর তো এখনো পুরো জীবন পরে আছে। ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করা ই আমার দায়িত্ব ছিলো। ছেলে এখন বড় হয়েছে আমার দায়িত্ব শেষ। তুই ও বড় হয়েছিস, আমি না হলেও চলবে।কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তোর মৃত্যু দেখতে পারবো না।ভালো থাকিস, তোর মতো ভালোবাসা আর কেউ দেয় নি। নিজের শরীরের যত্ন নিস। আমি থাকবো না বলে মন খারাপ করিস না। এই অপারেশনের পর তুই ঠিক হয়ে যাবি। জানি তুই এখন কাদঁছিস।কাদিঁস না মা!! আমি তোর সাথে সবসময় ই আছি।তোর জন্য লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনেছিলাম,দেয়ার সাহস হয় নি কখনো। পছন্দ হলে পড়িস.............
তোর
" মণি"

0 Com

 | Kathamala - read, write and publish story, poem for free in hindi, english, bengali

  • Pen Name -
  • 2 years ago
Comments

To comment on content, please Login!

Comments & Reviews (0)

No comments yet :(