ভাবলাম ভুল কিছু বললাম নাকি! সে আঁচল দিয়ে লাল চোখের পানি মুছে বললো, " আমার কথা ভাবলে?" আমাদের মতো মানুষের কথা কি কেউ ভাবে! আমি তখন তাকে বসিয়ে খাবার বারলাম যদিও ঠিক মতো বারতে পারি না খাবার। খাবার বেরে বললাম "খাও"!
সে খাবেই না, কিছুটা জোর করেই খাওয়ালাম তাকে।তারপর আমি চলে গেলাম কোচিং এ। মণি রাতের রান্না করে চলে যায়। পরদিন মা থাকতে থাকতেই মণি চলে আসে। মা বললো,"তুমি দুপুরে রান্না করে খাওনা কেন? এভাবে না খেয়ে কাজ করলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।গতদিনের মতো আজ ও সে কেঁদে ফেললো। মা তার মাথায় হাত দিয়ে বললো, " আমি হলাম এই বাড়ির কত্রী, পরিবারের সকলের ভালো রাখার দায়িত্ব আমার। আর এখন তো তুমি এই পরিবারের সদস্য। " এভাবে মণি অাস্তে আস্তে আমাদের কাছের মানুষ হয়ে যায়।
কথায় কথায় একদিন জানালা মণির ছেলে নাকি ভালোই মেধাবী আমার বয়সী। মাকে বললাম, বিকেলে মণির ছেলে আমার সাথে পড়লে কেমন হয়? মা বললো ভালোই! নীলুর সব টাকা তো স্বামীর পিছেই যায়।মণি কে মা বললে মণি প্রথমে একটু সংকোচ বোধ করে পরে রাজি হয়ে যায়। এভাবে দিন যায় দিন অাসে দিন যায়.....
১০ বছর পর----
হঠাৎ একদিন বাসায় এসে শরীর অনেক খারাপ হয়। সাথে সাথে হসপিটালের নিয়ে যায়। ডাক্তারের মুখ দেখে ভালো কিছু মনে হলো না। শুধু দেখলাম মণি আঁচল দিয়ে মুখ মুছছে। মাকে অনেক জোরাজুরির পর জানতে পারলাম আমার কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে। Emergency অপারেশন করতে হবে নাহলে কিছু আর করার থাকবে না। কিডনি পাওয়া এতো সহজ না তারউপর আমার ব্লাড প্রেশার আছে, ব্লাডগ্রুপ (AB-) ডাক্তার আশা ছেরে দিলো। শেষ মুহূর্তে একজন ডোনার পাওয়া গেলো। কিন্তু ডোনারের পরিচয় নাকি অজ্ঞাত থাকবে। অপারেশন শুরুর আগে সকলের সাথে দেখা করতে দিলো। মা-বাবার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সবাই সাহস দিলো অনেক। কিন্তু মণির কথার কোন অর্থ খুঁজে পেলাম না।সে বললো, " আমার শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও তোকে আমি বাঁচাবো।" আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবে অপারেশন হয়ে গেলো। ১২ ঘন্টা পর বেডে দেয়া হলো আমায়। সবাই আসলো কিন্তু মণিকে দেখলাম না কোথাও।
মা! মণি কোথায়?
জানি না রে তোর সাথে দেখা হওয়ার পর আর দেখলাম না।
সবাই চলে যাওয়ার পর একজন নার্স আমাকে এক টুকরো কাগজ দিয়ে বললো, এটা তোমাকে একজন দিতে বলেছিলো।
চিঠি টা পড়তে গিয়ে আমার বুকটা ফেটেঁ গেলো।
--আমি আর কতদিন ই বা বাঁচবো, তোর তো এখনো পুরো জীবন পরে আছে। ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করা ই আমার দায়িত্ব ছিলো। ছেলে এখন বড় হয়েছে আমার দায়িত্ব শেষ। তুই ও বড় হয়েছিস, আমি না হলেও চলবে।কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তোর মৃত্যু দেখতে পারবো না।ভালো থাকিস, তোর মতো ভালোবাসা আর কেউ দেয় নি। নিজের শরীরের যত্ন নিস। আমি থাকবো না বলে মন খারাপ করিস না। এই অপারেশনের পর তুই ঠিক হয়ে যাবি। জানি তুই এখন কাদঁছিস।কাদিঁস না মা!! আমি তোর সাথে সবসময় ই আছি।তোর জন্য লাল টুকটুকে একটা শাড়ি কিনেছিলাম,দেয়ার সাহস হয় নি কখনো। পছন্দ হলে পড়িস.............
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(