একটি ছোট্ট গ্রাম রাজধানী শহর হতে ৫০০ কিঃমি,দূরে অবস্থিত। সেখানে ছোট্ট একটি কুঁড়ে ঘরে বসবাস করতো অধম রায় ও তার স্ত্রী পাতারাণী।তখন দিনটি ছিল গ্রীষ্মকাল তার স্ত্রী সন্তানসম্ভাবা কিন্তু অধম রায়ের কঠিন অসুখ। অধম রায় ভেবে নিয়েছে সে, বেশি দিন বাঁচবে না।তাই সে গ্রামের পঞ্চায়েতের কাছে কিছু নগদ অর্থ ও তার স্ত্রীর গহনাপত্র জমা রাখে। এর কিছু দিন পর সে,মারা যায়। তিনি মারা যাওয়ার এক মাস পর পুত্র সন্তান জন্ম দেন এবং তার নাম রাখা হয় পলক রায়। তার সন্তান ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, তাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করানো হয়। পাতা রাণীর স্বামী মারা যাওয়ার পর সর্বহারা হয়ে পঞ্চায়েতের কামলা দিয়ে সংসার চালায়। তার ছেলে স্কুলের গুডি পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে এখন পড়ালেখা করে। তার মা কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পঞ্চায়েতের বাড়িতে কাজ করে তেমন মাইনে পায় না। তাদের সংসার ও সন্তানের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কষ্ট করে পলক রায় মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন গ্রামে তো কলেজ নেই তাই তাকে শহরে পড়ালেখা করাবে তার সামর্থ্য ও নেই পাতা রাণীর। তার মা অসুস্থ কিন্তু তার চিন্তা না করে সন্তানকে পড়ালেখা করাবে বলে তার স্বামীর জমানো অর্থ ও গহনা পঞ্চায়েতের কাছে জমা রেখেছিলো সেটা আনতে গিয়াছে। সে তার স্বামীর কথাগুলো বললো বললো এবং পঞ্চায়েত দিতে অস্বীকার করে ও বলে তার স্বামী তার কাছে কোনো কিছু জমা রাখেনি। তারা গরিব বলে কারো কাছে বিচার চাইতে পারে না তাই সে হতাশা ও কষ্ট নিয়ে ভগবানের কাছে বিচার দিতে দিতে ও কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফিরে আসে। পলক রায় তার মাকে কাঁদতে দেখে বলে কি হয়েছে মা? তখন সব খুলে বললো। এবার পলক রায় বলে আমি আর পড়ালেখা করাবো না শহরে গিয়ে কাজ করে তোমার চিকিৎসা করাবো। তখন তার বাবার সপ্নের কথা বলে তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে। কিন্তু এই দিকে তো অর্থ নেই!তার মা তাকে বলে আমি আরো কয়েকটি বাড়িতে কাজ করবো বলেকয়ে রেখেছি। তার মা তার হাতে জমানো টাকা দিয়ে বললো নে বাবজান শহরে গিয়ে পড়ালেখা কর। মন খারাপ করে বলে,আমি তোমার চিকিৎসা করাবো পড়বো না। কিন্তু তার বাবার প্রতিজ্ঞা তো রাখতে হবে। তাকে সাজিয়ে গুজিয়ে শহরের উদ্দেশ্য পাঠানোর পথে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন যখন গ্রামের পুল পার হওয়ার পর আর সন্তান দেখা যায় না। মায়ের ভয় ও কষ্ট উভয়ই হচ্ছে তার ছেলে নতুন শহরে যাচ্ছে। পলক শহরে নতুন বাসে উঠার সময় টাকাগুলো হারিয়ে যায়। শহরে গিয়ে একা হয়ে গেছে এবং সে বসে কান্না করতে থাকে। হঠাৎ একটি অচেনা লোক এসে খাবার হোটেলে কাজে লাগিয়ে দেয় ও কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। পলক তার মাকে সব বিস্তারিত চিঠিতে লিখে পাঠায়। চিঠি যায় পঞ্চায়েতের কাছে তখন সব খুলে বলে তার মায়ের কাছে। অনেক দিন পর হয়ে যায় মায়ের কাছে টাকা পাঠায় চিঠি পাঠায় কোনো উত্তর নেই। তার মাও প্রায় সময় যায় ছেলের খবর নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতের কাছে কিন্তু কিছুই বলে না বরং রেগে যায়। টাকা পেয়েও তার মাকে দেয়না। পলক তার একটি চিঠিতে বলে আমি তোমার জন্য টাকা জমাচ্ছি চিকিৎসার জন্য তোমার আর মানুষের বাড়িতে কাজ করতে হবে না। পঞ্চায়েত এই চিঠি পেয়ে রেগে আগুন কারণ তার কাজের লোক পাবে না তাই চিঠি ও টাকা লুকিয়ে রাখে। যখন পাতা রাণী ছেলের কথা বারবার জিজ্ঞেস করে সে বলে তোমার ছেলে অনেক ভালো আছে, সত্যিটা বলে না। এর কিছু দিন পর পাতা রাণী তার কুঁড়ে ঘরে অসুস্থ অবস্থায় মারা যায়। গরিব বলে তাকে তাদের ধর্মের রীতি অনুযায়ী পোরানো হয় না বরং মাটি চাপা দিয়ে পঞ্চায়েতের পয়সা খরচ থেকে বাঁচে। পলকের মায়ের মৃত্যুর সংবাদ কেউ পাঠায়নি তার কাছে। মায়ের মৃত্যুর দিন পলকের হাতে আগুন লেগে পুরে যায়। তার মায়ের কথা খুব মনে পরে এবং প্রায় রাতে ঘুমের ঘরে সপ্ন দেখে। সপ্নে তার মা বলে,বাবজান তুই কি আমাকে দেখতে আসবি না? যখনই সে বলে উঠে আমি তোমার চিকিৎসার টাকা জমিয়ে আসবো আর তোমার মানুষের বাড়িতে কাজ করতে হবে না হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং কান্না করতে থাকে। এভাবে অনেকগুলো বছর কেঁটে যায় বাড়িতে আসতে পারে না। পলক রায় তার মায়ের মৃত্যুর প্রায় আট বছর পর বাড়িতে ফিরে আসে মায়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা নিয়ে। সে প্রথমে বাড়িতে এসে দেখে কুঁড়ে ঘরটি ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে। তার মাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে এবং পঞ্চায়েতের কাছে যায়। তখন তাকে বলে অনেক দিন আগে তোর মা মারা গেছে। এটা শুনে পলক রায় অজড়ে কান্না করতে থাকে এ যেন অসমাপ্ত আত্মচিৎকার।
Comments & Reviews (0)
No comments yet :(